যশোরে ত্রিপল বাঁধা ট্রাক থেকে বেরিয়ে এলেন নারী-শিশুসহ ৬০ জন

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় আটক করা হলো ত্রিপল দিয়ে বাঁধা দুটি ট্রাক। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে খুলে ফেলা হলো ট্রাকের ত্রিপল।

এরপর দুই ট্রাক থেকে বেরিয়ে এলেন নারী-শিশুসহ ৬০ জন শ্রমিক। তারা মানিকগঞ্জ ও কুমিল্লা থেকে ফিরছিলেন সাতক্ষীরার তালা, শ্যামনগর ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়।

রোববার (১২ এপ্রিল) সকালে ট্রাক দুটি আটকের পর প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় দুপুরে তাদেরকে নিজ নিজ গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের মণিরামপুর পৌরশহর অনেকটাই ফাঁকা। এরই মধ্যে রোববার সকালে ত্রিপলে ঢেকে একটি ট্রাক পৌর শহরের গোহাটা মোড়ে পৌঁছায়। ট্রাকটিতে ত্রিপল বাঁধা থাকায় টহলরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহ হয়। তারা ট্রাকটি দাঁড় করে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসংলগ্ন উত্তর দেন।

একপর্যায়ে উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চাপে ত্রিপল খুলতেই বেরিয়ে আসেন দুই শিশু, ছয় নারীসহ ২৯ জন। এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরই একইভাবে আরেকটি ট্রাকের ত্রিপল খুললে বেরিয়ে আসেন নারী-শিশুসহ আরও ৩১ জন। তারা মানিকগঞ্জ ও কুমিল্লার ইটভাটা শ্রমিক।

খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুফল চন্দ্র গোলদারের নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ট্রাক দুটি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যান। সেখানে পুরো ত্রিপল খুলে ট্রাকচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কাগজপত্র চেক করা হয়। এ সময় ট্রাক দুটি ও ট্রাকে থাকা লোকজনকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়।

ট্রাকচালক নূরুল ইসলাম বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। আমার ট্রাকের মালিক যশোরের আরবপুরের স্বপনই সব কিছু বলতে পারবেন।

ট্রাকে থাকা শ্রমিক ইসলাম বলেন, আমরা মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার মেসার্স এ.কে.বি অ্যান্ড কোং নামের একটি ইটভাটায় কাজ করি। এর মধ্যে ৪জনের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় এবং বাকিদের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়।

অপর ট্রাকচালক কোরবান আলী জানান, তার ট্রাকের মালিক যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোলাম মোস্তফা। এই শ্রমিকদের কুমিল্লা থেকে নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা।

কুমিল্লা থেকে আসা (ঢাকা মেট্রো-ট-১৪-৬০০৩) ট্রাকের যাত্রী শফিকুল ইসলাম জানান, ছয়মাস আগে তারা ৩২ জন কুমিল্লার কোতয়ালি থানার আমড়াতলী বাজারে স্বজন ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায় কাজে যান। হঠাৎ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারা সবাই সেখানে আটকা পড়েন। পরে শনিবার ট্রাক ভাড়া করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈইখালী ইউনিয়নের নইকাঠি গ্রামে ফিরছিলেন তারা। তাদের সাথে আরও একট্রাক মানুষ ছিল। তারাও সাতক্ষীরায় প্রশাসনের হাতে আটকা পড়েছে।

অপর ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ড-১২-৫১৫৫) যাত্রী কামরুল ইসলাম জানান, তারা ২৯জনও কয়েকমাস আগে পাইকগাছার লক্ষীখোলা গ্রাম থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার খোলাপাড়ার একেএমবি এন্ড কোং ইটভাটায় কাজে যান। তারাও সেখানে আটকা পড়েন। ট্রাকভাড়া করে তারা বাড়িতে ফিরছিলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তারা রওনা দিয়েছেন।

পরে প্রশাসনের উদ্যোগে মণিরামপুর থেকে তাদেরকে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জিম্মায় দেয়া হয়। কেশবপুর থেকে তাদেরকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ত্রিপল খুলে নারী-শিশুসহ ৬০ জনকে পাওয়া গেছে। পরে তাদেরকে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।