ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ আর নেই। শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। রোববার নমুনা পরীক্ষায় শেখ আবদুল্লাহর কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। গোপালগঞ্জে তার দাফন কাফন করা হবে।
শেখ আবদুল্লাহ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি কলেজ ছাত্রসংসদ নেতা থেকে জেলা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। হয়েছেন এমপি-মন্ত্রী।
শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাকে টেকনোক্রেট কোটায় প্রতিমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তার ত্যাগ বেশ আলোচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ মতিউর রহমান ও মা রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন তিনি। এরপর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশোনা করেন।
১৯৬১ সালে মেট্রিক, ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বি কম (অনার্স) ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম কম এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রিও নেন শেখ আবদুল্লাহ।
শিক্ষা জীবন শেষে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও আইনজীবী হিসেবে গোপালগঞ্জ জজ কোর্ট ও ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন আবদুল্লাহ। তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে। কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুব লীগে যোগ দেন। গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া এই রাজনীতিক ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন শেখ আবদুল্লাহ। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।