তালিকাভুক্ত হয়েও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি যশোরের বলরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

jessore map

বিনা বেতনে চাকরি করার দিন শেষ হচ্ছে না সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের। দীর্ঘ ২৩ বছর বিনাপারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করলেও সুদিন ফিরছে না ওই বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার কারণে ২৩ বছর পরও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি বিদ্যালয়টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসময়ে বিদ্যালয়টি এসএসসি, জেএসসি পরীক্ষায় ঈর্ষানীয় ফলাফল অর্জন করে। এমপিও ভুিক্তর সকল যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কতিপয় ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিল করার জন্য নানা রকম ফন্দি ফিকির করতে থাকে। তারা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়।

সূত্র মতে, যশোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের সহায়তায় বিদ্যালয়ের সভাপতি এম এম আকরাম হোসেন ওরফে খিদির বিশ্বাস ও সদর উপজেলার মাহিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ ভাবে শিক্ষক নিয়োগের কারণে এমপিও ভুক্ত হতে পারেন বিদ্যালয়টি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই দুর্নীতিবাজরা ১১জন শিক্ষক-কর্মচারীকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের পায়তারা করে। এই ১১জনের নিয়োগের জন্য কোন বোর্ড করা হয়নি। এমনকি জাল স্বাক্ষর দিয়ে কাগজপত্র তৈরি করা হয়। যে কারণে বৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত সাত শিক্ষকও এমপিও ভুক্ত হতে পারেনি।

সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিধি সম্মতভাবে ১৩জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ চারজনকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করে। বরখাস্ত হওয়া ওই চার শিক্ষক যশোর সদর সহকারী জজ আদালতসহ উচ্চ আদালতে (হাইকোটে) রিট পিটিশন দাখিল করেন। বাকী নয় জনের মধ্যে দুই জন অন্য বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে চলে যান। অবশিষ্ট সাত জন শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে পাঠদান চালিয়ে আসছিলেন। এ বছর বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এমপিও ভুক্তির জন্য সকল যোগ্যতা অর্জন করে। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির তালিকা ভুক্তও হয়। কিন্তু ওই জালিয়াতি চক্রটি অসৎ উদ্দেশ্যে বিপুল লাভের জন্য বিচারাধীন পদসহ শুন্য ও সৃষ্ট পদে ১১জনকে নিয়োগ দেয়। যা থেকে জালিয়াতি চক্রটি কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য করে। জালিয়াতি চক্রটির কারণেই বিধি সম্মত ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত সাত শিক্ষক এমপিও হয়নি।

সূত্রের অভিযোগ, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সকল জাল-জালিয়াতির কাগজপত্র তৈরি করে দেন সদর উপজেলার মাহিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বলরামপুর বিদ্যালয়ের দূরাত্ব ২০ কিলোমিটার। আমি ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এমপিও ভুক্তির জন্য সহযোগিতা করেছিলাম। তবে নিয়োগ-বাণিজ্যের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি এম এম আকরাম বিশ্বাস ওরফে খিদির বিশ্বাস তার বউমা (বেটার বউ) কে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ও ছেলেকে পিয়ন পদে নিয়োগ দিতে এসব জাল-জালিয়াতি করেছেন। আর বিদ্যালয়ের কেরানি নূর ইসলামকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। আর এভাবে নানা অনিয়মকে নিয়মে বাননোর পায়তারা করেছেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এম এম আকরাম বিশ্বাস ওরফে খিদির বিশ্বাস বলেন, আমি ডায়াবেটিক রোগি। আমি অসুস্থ্য মানুষ। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে সব মিথ্যা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর সাথে যোযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এমপিও ভুক্তির জন্য কেউ আমার কাছে কোন কাগজপত্র পাঠায়নি। আমার বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ আছে। তারা আমার নামে এসব বলে বেড়াচ্ছে। আমি কোন অন্যায়ের সাথে নেই। আমার কোন স্বাক্ষর কিম্বা কোন রেকর্ড নেই। আমি এ জেলায় ২৪ বছর ধরে চাকরি করছি।