যেসব লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হবেন

কোন লক্ষণ থাকলে বাসায় থাকবেন আর কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হবেন—এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক তাসনিম জারা।

কভিড-১৯-এ আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই সুস্থ হয়ে ওঠে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই। তবে কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তার আগে জানতে হবে, কারা হাসপাতালে ভর্তি হবে আর কারা বাড়িতে চিকিৎসা নেবে।

যেসব উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে নয়

কভিড-১৯ ছাড়াও মানুষের সর্দি, জ্বর, কাশি হয়। তবে এ সময় এসব লক্ষণ দেখা দিলে করোনার লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়েই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এমনটি হলে বাসার বাইরে না গিয়ে ঘরে অবস্থান করতে হবে।

আর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে সেটাও করা উচিত। মনে রাখবেন, হালকা উপসর্গের জন্য এই মুহূর্তে হাসপাতালে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং হাসপাতালে গেলে অন্যান্য ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই তা হলো :

জ্বর : থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপুন। অথবা বুকে-পিঠে হাত দিয়ে যদি দেখেন শরীর স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি গরম, তাহলে বাসায় বিশ্রাম নিন। এটা নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা নয়। এমনটি হলে হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে ঘরে থেকে কিছু নিয়ম মানলেই জ্বর সেরে যায়।

কাশি : বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুকনো কাশি হয়- অর্থাৎ কাশির সঙ্গে কফ বের হয় না। ফুসফুস বা হার্টের রোগের কারণে যাদের এমনিতেই কাশি থাকে, তাদের কাশির পরিমাণ বেড়ে যায়। এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন।

ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদ চলে যাওয়া : অনেক কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী তাদের মুখের স্বাদ বুঝতে পারে না। অনেকের ঘ্রাণশক্তিও চলে যায় অথবা ঘ্রাণ ও স্বাদ আগের চেয়ে ভিন্ন হয়ে যায়। এমন সমস্যা আসলে সাময়িক।

ক্লান্তি : অনেকের শরীর খুব দুর্বল লাগে এবং তারা আগের চেয়ে বেশি ক্লান্তি বোধ করে।

আরো কিছু রোগী আছে, যেমন সর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা, চোখের ব্যথা ইত্যাদি। কনজাংটিভাইটিস বা চোখের ব্যথা হলে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখের পাতা একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে যায়, পুঁজ বের হতে পারে ইত্যাদি। একে অনেকে চোখ ওঠাও বলে। এই সমস্যা অবশ্য কয়েক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।

র‌্যাশ ওঠা : গায়ে র‌্যাশ উঠতে পারে, হাতের আঙুলের রং বদলে যেতে পারে। এ রকম সমস্যা দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।

মনে রাখবেন, উপরোক্ত লক্ষণগুলোর কিছু যদি তীব্রতর হয়, যেমন বমি কোনোভাবেই থামছে না। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

যখন হাসপাতালে যেতে হবে

কভিডের ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। যেমন :

শ্বাসকষ্ট : দম আটকে যাচ্ছে, হাঁটতে গেলে কষ্ট হচ্ছে, কথা আটকে যাচ্ছে—এমন পরিস্থিতি হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিন। ঘরে পালস অক্সিমিটার থাকলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ৯৫-এর নিচে থাকে, তাহলে হাসপাতালে নিন।

ঠোঁট ও চেহারা নীল হয়ে যাওয়া : এর মানে হচ্ছে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন লেভেল দেখা যেতে পারে। অনেক কভিড রোগীর শ্বাসকষ্ট হয় না, কিন্তু অক্সিজেনের স্যাচুরেশন নেমে যেতে পারে। এমনটি হলে হাসপাতালে নিন।

প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা খুব কমে যাওয়া : যখন দেখবেন প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে খুব কমে গেছে অথবা প্রস্রাব একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, তখন সতর্ক হতে হবে। এটা কিডনি রোগের লক্ষণ। এ পরিস্থিতিতে বিলম্ব করা ঠিক হবে না। রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ লাগা : এটা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম লক্ষণ। আবার তীব্র শ্বাসকষ্টের কারণেও হতে পারে। বুকে ব্যথাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

এ ছাড়া হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ঘামা, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হতে পারে। তবে হার্ট অ্যাটাক হলেই যে বুকে ব্যথা থাকবে, এমনটি কিন্তু নয়। এমন র‌্যাশ উঠেছে, যার ওপর গ্লাস দিয়ে চাপ দিলে মিলিয়ে যায় না। এটা ব্রেন ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। মুখে কথা আটকে যাচ্ছে, হাত ও পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না—এটা স্ট্রোকের লক্ষণ।

বেশি সাবধান হোন

আরো কয়েকটি লক্ষণের ক্ষেত্রে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে রোগী হয়তো নিজেও বুঝতে পারবে না, কিন্তু তার পরিচর্যাকারীদের সতর্ক হতে হবে। যেমন :

♦ ঝিমুতে থাকা। অর্থাৎ রোগী একেবারেই জেগে থাকতে পারছে না অথচ ওই সময়ে হয়তো জেগে থাকতে পারত। ডাকলেও তাকে অনেক সময় জাগিয়ে তোলা যায় না, বারবার ঝিমিয়ে পড়ে।

♦ রোগী ভুলে যাচ্ছে, কোনো কিছুই মনে করতে পারছে না, এ রকম লক্ষণ কিন্তু রোগীর জন্য স্বাভাবিক লক্ষণ নয়।

♦ কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে কালবিলম্ব না করে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।

এসব লক্ষণ ছাড়াও যদি মনে হয় রোগী দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলেও তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। অথবা যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, লিভার, কিডনি রোগী এবং যাদের বাসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, তাদেরও হাসপাতালে নিতে হবে। (ইন্টারনেট থেকে)