ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত দেন না সাহেদ

shahed
ফাইল ছবি

করোনা চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার খবর ফাঁস হওয়ার পর রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের আরও অনেক অপকর্মের খবর বেরিয়ে আসছে। প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাসপাতাল, গাড়ি ও ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণ নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু টাকা শোধ করার কোনো খবর নেই। ফলে একাধিক ব্যাংকে খেলাপির তালিকায় রয়েছে সাহেদ ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, সাহেদ প্রথমে ব্যাংকে কিছু টাকা আমানত রাখতেন। কিছুদিন পরই ক্ষমতাসীনদের নাম ভাঙিয়ে ঋণ নিতেন। একবার ঋণ হাতে পেলে আর খবর থাকত না। খেলাপির টাকা চাইলে বিভিন্নভাবে চাপে ফেলতেন ব্যাংকারদের।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের নামে এনআরবি ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা ঋণ নেন সাহেদ। পাশাপাশি সাহেদ করিম নামে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করেন। এখন ঋণের টাকা ও খেলাপি ক্রেডিট কার্ডের বিল শোধ করছেন না। টাকা আদায়ে ব্যাংকটি দুটি মামলা করেছে। এর মধ্যে একটি সুদসহ তিন কোটি ৫২ লাখ টাকার মামলা। অন্যটি ক্রেডিট কার্ডের চার লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার।

অন্যদিকে হাসপাতালের যন্ত্রাংশ কেনার নামে পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ২০১৫ সালে দুই কোটি টাকা ঋণ নেন সাহেদ। কিন্তু সেই টাকা আর পরিশোধ হয়নি। এছাড়া পূবালী ব্যাংক থেকে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি কেনেন সাহেদ করিম। এর বিপরীতে পাঁচ লাখ টাকার গ্যারান্টিও দেন তিনি। কয়েকটি কিস্তি শোধ করার পর আর কোনো খবর নেই। সুদে-আসলে তার পাওনা ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, রিজেন্ট কেসিএস, রিজেন্ট হাসপাতাল, আলবার্ট গ্লোবাল লিমিটেড, রিজেন্ট আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ প্রিমিয়ার ব্যাংকে আটটি হিসাব রয়েছে সাহেদের। এই হিসাবগুলোতে জমা আছে ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বড় অংকের ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছিল ব্যাংকটিতে। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। সাহেদ করিম ব্যাংকটি থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়েছিলেন যার বিপরীতে খেলাপির পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা।

এছাড়া ইউসিবি ব্যাংকের দুই লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকে এক লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৪৪ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ২৪ হাজার টাকা ঋণখেলাপি রয়েছে সাহেদের। পাশাপাশি মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এক লাখ টাকার মেয়াদি ঋণ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ৬ জুলাই রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরদিন ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় গত বুধবার (১৫ জুলাই) সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।

এদিকে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ পারভেজকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আর সাহেদের প্রধান সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীর দ্বিতীয় দফায় সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।