প্রদীপের দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তারের অনুমতি চেয়েছে র‌্যাব

পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহতের ঘটনায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি বরখাস্ত প্রদীপ কুমার দাশের দেহরক্ষী রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে র‌্যাব।

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার আদালতে এই আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেলে এ বিষয়ে অনুমতি আসতে পারে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘মেজর সিনহা রাশেদ নিহতের ঘটনায় প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে হলে অনুমতি লাগে। এ কারণেই র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’

গ্রেপ্তারের পর তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘আদালতের অনুমতি পেলে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হবে। তদন্ত কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে তাকে (রুবেল শর্মা) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করবেন।’

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের পাহাড়ে একটি ডকুমেন্টারির জন্য ভিডিওচিত্র ধারণ করে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ দিয়ে হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহতের বোন। এরপর পুলিশের সাত সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আদালতের নির্দেশে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও পুলিশের মামলার সাক্ষী স্থানীয় তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি প্রদীপের নির্দেশে গুলি করে লিয়াকত

ঘটনার দিন রাতে এপিবিএনের চেকপোস্টে যখন সিনহাকে থামানো হয়, তার আগে থেকেই চেকপোস্টের কাছে সাদা পোশাকে উপস্থিত ছিলেন বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দলাল রক্ষিত। এপিবিএনের একজন সদস্য চেকপোস্টে মেজর সিনহার সিলভার রঙের প্রাইভেট কারটি থামার সংকেত দেন। কারটি একটু এগিয়ে গিয়ে থামে। কাছে যান এপিবিএনের ওই সদস্য।

পরিচয় জানতে চাইলে সিনহা নিজেকে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর পরিচয় দেন। এসময় তিনি মেজর সিনহাকে চলে যেতে বলেন। হঠাৎই পরিদর্শক লিয়াকত দৌঁড়ে এসে গাড়ির চালকের আসনে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। ‘ইংরেজিতে’ নিজেকে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পরিচয় দেন মেজর সিনহা। এরপরপরই প্রাইভেটকার থেকে প্রথমে নামানো হয় সিনহার ভিডিও ধারণের সহযোগী সিফাতকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাপ্পড় দেওয়া হয় এবং জাপটে ধরে মাটিতে ফেলা দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেখে সিনহা চালকের আসন থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন।

এ সময় সিনহাকে ‘হাত উঁচু’ করতে বলেই দূর থেকে পরপর দুটি গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত। সিনহার লাইসেন্স করা পিস্তল তখন গাড়িতেই ছিল। এরপর কাছে এসে আরও দুটি গুলি করেন পরিদর্শক লিয়াকত। এরপর সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কেই লুটিয়ে পড়েন মেজর সিনহা। পরে ঘটনাস্থলে এসে ওসি প্রদীপ অট্টহাসি দিয়ে গুলিবিদ্ধ সিনহার বুকের বাম পাশে পা দিয়ে আঘাত করেন। এরপর পা দিয়ে গলা চেপে ধরেন।