‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্ধ একজনের নামে, নির্মাণ হচ্ছে অন্যজনের বাড়িতে’

Jhenaidah map

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে এবার পুরোটায় জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কাগজে-কলমে একজনের নামে বরাদ্ধ থাকলেও নির্মাণ করা হচ্ছে অন্যজনের বাড়িতে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর যোগসাজসে ইউপি চেয়ারম্যান অর্থের বিনিময়ে এ দূর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরে শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউনিয়নের বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের রউফ মোল্লার ছেলে রাকিবুল ইসলামের নামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণের বরাদ্ধ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বগুড়া ইউনিয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি তার নাম প্রস্তাব করে। প্রস্তাবনা অনুসারে তার নামে ঘর বরাদ্ধ দেয় শৈলকুপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। সে অনুসারে উপজেলা ভূমি অফিস তার জমির চৌহদ্দি যাচাই, ভোটার আইডি, ছবিসহ সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে যা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে সংরক্ষিত। ঘর বরাদ্ধের পর বগুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ্বাস ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মলয় রঞ্জন বিশ্বাস অর্থের বিনিময়ে ঘর রাকু নামের অন্যজনের বাড়িতে নির্মাণ করছেন। ভোটার আইডি অনুযায়ী যার পিতার নাম আব্দুল রউফ মিয়া।

বরাদ্ধ পাওয়া রাকিবুলের পিতা রউফ মোল্লা বলেন, কাগজপত্র নেওয়ার পর আর কোন খোজ আমরা পায়নি। হঠাৎ ১০ দিন আগে পিআইও অফিস থেকে ফোন করে বলছেন আমার ঘর কি কমপ্লিট হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়িতে তো ঘরই নির্মাণ হচ্ছে না তো কমপ্লিট হবে কি করে। আমার ছেলের নামে বরাদ্ধকৃত ঘর চেয়ারম্যান টাকা খেয়ে অন্যজনের বাড়িতে নির্মাণ করাচ্ছে। এর সাথে পিআইও অফিসের লোকজন জড়িত।

বরাদ্ধ পাওয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, বগুড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নানাভাবে মানুষকে হয়রানি আর জালিয়াতি করে আসছে। আমি গরীব মানুষ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা ঘর নির্মাণ করে দিবে যেন আমি পরিবার নিয়ে মাথা গুজে থাকতে পারি। চেয়ারম্যান টাকার বিনিময়ে আমার ঘর অন্যজনের বাড়িতে নির্মাণ করাচ্ছে। এর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

অভিযোগের সংবাদ পেয়ে শৈলকুপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঘর বরাদ্ধের ফাইলে রাকিবুল ইসলামের সকল কাগজপত্র রয়েছে। সেখানে রাকু’র নামের কোন ফাইল নেই।

রাকুর বাড়িতে ঘর বরাদ্ধ কিভাবে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, রাকুর নামে বরাদ্ধ হয়েছে। রাকুর নামের সকল কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজ তো এখানেই থাকার কথা ছিল, এখন নেই, কোথায় আছে আমি জানি না।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, না সব ঠিক আছে। যার নামে বরাদ্ধ তার বাড়িতেই ঘর হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, বগুড়া ইউনিয়নে ঘর নির্মাণে সমস্যা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। একজনের বরাদ্ধকৃত ঘর যদি অন্যজনের বাড়িতে নির্মাণ করা হয় তাহলে সেখান থেকে তুলে যার নামে বরাদ্ধ আছে তার বাড়িতেই নির্মাণ করে দেওয়া হবে। আর এ অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।