স্বর্ণকন্যা শাম্মীর দুর্দশা লাঘবের প্রতিশ্রুতি এমপি নাবিলের

স্বর্ণকন্যা শাম্মী আক্তারের দুচোখে চিক চিক করে ওঠে আনন্দাশ্রু! ভাবতেই পারেননি, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তার দুঃখ কষ্টের সারথী হবেন। তার এই ক্রান্তিকালে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ তাকে বসবাসের জন্যে খুব শিগগিরই একটি ঘর করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া নগদ ৫০ হাজার টাকা ও প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা সহায়তারও ঘোষণা দিলেন।

তায়কোয়ান্দোতে সোনাজয়ী বাংলাদেশের গর্ব শাম্মী বুধবার দুপুরে এমপির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।
যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ায় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসভবনে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে সাক্ষাৎ করেন।

শাম্মীর ৭ বছর বয়সী ছেলে আবু হুরায়রা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে ও আবু হামজা (৪) এখনও স্কুলে যায় না।
সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে যশোরে পৌঁছেই শাম্মী আক্তার ও তার সন্তানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ও তাদের খোঁজখবর নেন। তিনি শাম্মীর বর্তমান পরিস্থিতিতে সমবেদনা প্রকাশ ও তার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা আমাদের দেশের সম্পদ। সারা বিশ্বে শাম্মীর মতো খেলোয়াড়রা দেশকে ব্রান্ডিং করেন। তাদের পাশে সকলকেই দাঁড়াতে হবে।’

তিনি শাম্মী আক্তারের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এরপর যশোর সদরের যে কোনও ইউনিয়নে সুবিধাজনক জায়গায় তার সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্যে একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এলক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান। এছাড়া তিনি এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও তার সন্তানদের পড়াশুনা অব্যাহত রাখতে প্রতিমাসে ৫ হাজার করে টাকা দেওয়ারও ঘোষণা দেন।

এমপি কাজী নাবিল আহমেদের এই আশ্বাসে দারুণ খুশি শাম্মী আক্তার বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি তিনি আমার ও আমার সন্তানদের জন্যে এতো শিগগির এমন ব্যবস্থা নেবেন। তার কথা শুনে আমি অনেক ভরসা পেয়েছি। সন্তানদের নিয়ে দু’বেলা খেয়ে পরে একটি ছাদের নিচে থাকতে পারবো- ভাবতেই দু’চোখে জল এসে গেছে।’

তিনি এমপি নাবিল আহমেদের মহানুভবতার ভূয়সী প্রশংসা ও সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

শাম্মী আক্তার তায়কোয়ান্দোতে এসএ গেমসে সোনাজয়ী বাংলাদেশের খেলোয়াড়ের মধ্যে অন্যতম । ২০১০ সালের গেমসে তিনি সোনা জেতেন। বাংলাদেশ আনসারের হয়ে ঘরোয়া খেলায়ও তার সাফল্য ঈর্ষণীয়। টানা চারবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন। ঢাকায় কোরিয়ান কাপ তায়কোয়ান্দোয় জেতেন তিন সোনা। খেলেছেন ২০১০ গুয়াংজু এশিয়ান গেমস ও চেন্নাইয়ের কমনওয়েলথ তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে। পেয়েছেন ব্ল্যাক বেল্ট উপাধিও।

খেলতে খেলতে পরিচয়ের সূত্রে ২০০৯ সালের ৫ জুন বিয়ে হয় সেনাবাহিনীর সৈনিক ও তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। পরে শারীরিক সমস্যার কারণে ডাক্তারদের পরামর্শে খেলা ছেড়ে সংসার শুরু করেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট ঝিনাইদহের সরোজগঞ্জ বংকিরায় শাম্মীর শ্বশুর বাড়িতে ডাকাতের হাতে খুন হন সাইফুল। এরপর সন্তানদের নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন তিনি।

বর্তমানে থাকেন যশোর সেনানিবাসের কোয়ার্টারে; চলছেন স্বামীর পেনশনের সামান্য টাকায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে তাকে কোয়ার্টার ছাড়তে হবে।

একটি জাতীয় দৈনিকে তার এই কষ্টগাথা ছাপা হলে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে বলেন।