লাকির সুদের চাপে আত্মহত্যা চেষ্টা : তদন্তে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকার চিহ্নিত সুদেকারবারী জাকিয়া সুলতানা লাকি ও সুদের চাপে আত্মহত্যা চেষ্টাকারী আলেয়া সুলতানা আলোর বাড়িতে সরেজমিন তদন্ত করেছেন যশোরের মানবাধিকার উন্নয়ন উদ্যোগ ফাউন্ডেশন। বুধবার দুপুরে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি আইনজীবী টিম তারা ওই এলায়ায় যান। একই সাথে তারা সুদেকারবারের সাথে জড়িত লাকির সহযোগিদের সাথেও সাক্ষাত করেন। পরে এলকাবাসীর সাথেও এ বিষয়ে আলোচনা করেন।

এদিকে সরেজমিন তদন্তে বেরিয়ে আসছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এলাকাবাসী লাকির বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন। বাড়ির সামনে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছবি ব্যবহার করে এ ধরণের নানা অপকর্ম চালাচ্ছে লাকির স্বামী সবুরও। লাকি চক্রের অত্যাচারে শুধু আলেয়া সুলতানায় নয়, এর আগেও টাকা ধার নিয়ে এলাকার একজন আত্মহত্যা করে মারা গেছে বলে উঠে এসেছে। এলাকাবাসী লাকি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

এদিকে একই দিন সাংবাদিকদের একটি টিম ওই এলাকায় অনুসন্ধানে যায়। এলাকার লোকমুখে উঠে আসে নানা অজানা কাহিনী। বুধবার বেলা তিনটায় সরেজমিনে খোলাডাঙ্গা এলাকায় লাকির বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, প্রায় দেড়বিঘা জমির উপর তার সুবিশাল ভিটে বাড়ি। বাড়ির প্রবেশ দারের পাশের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে সুবিশাল সাইনবোর্ড। সেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে যশোরের প্রথম শ্রেনীর রাজনীতিবিদদের ছবি সহ রয়েছে লাকির স্বামী সবুরের ছবি। এছাড়া কিনেই তার ভিটে বাড়িতে। এসি ঘর, রয়েছে বিশাল উঠান, গোয়ালঘর। এছাড়াও লাকি সবুর দম্পতির নামে বেনামে আরো অনেক সম্পদ রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

এদিকে শুধু লাকিই নয় তার সহযোগি আইনজীবী সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুনেরও রয়েছে নির্মানাধীন অট্টোলিকা। তার ভাইপো পশু চিকিৎসক রাকিব হাসান ইমনদের বাড়িও চোখে পড়ার মত। সুদে টাকা খাটিয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানেই তারা বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ সময় কথা হয় ওই এলাকার নুর ইসলামের ছেলে শুকুর আলী, একই এলাকার হানিফ বিশ্বাসের ছেলে শাহীন হোসেন, সালামের ছেলে সেলিম হোসেন, বৃদ্ধ আবু সাইদ, টগর মুন্সীর ছেলে আজাদ মুন্সী, মৃত ফজলুল করীমের ছেলে আবু আসাদ, আবু সাইদ, মৃত এহিয়ারের ছেলে সোয়েব মুন্সি সহ এলাকার অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, লাকির গংএর অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গরীবদের কাছে তারা পাঁচ হাজার টাকা লোন দিয়ে মাসে নিচ্ছে আট হাজার টাকা। এছাড়া, লাকি পরিবারের অত্যাচারে দশ বছর আগে ওই এলাকার মোহাম্মদ আলী নামের একজন মারা যান। পরে তার দুই ছেলে এলাকা ছেড়ে অনত্র চলে যায়।

তারা আরো জানান, লাকির কাছথেকে একই এলাকার রুকু নামের একজনকে টাকাদিয়ে চাপ সুষ্টি করে। পরে সে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

এলাকবাসী আরো জানান, লাকির ভাইপো রাকিব হাসান ইমনের এলাকায় রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। সুদেলেনদেনে ঝামেলা হলেও বাহিনীদিয়ে হত্যা সহ নানা ধরণের হুমকি ধামকি দেয়া হয় ভুক্তোভুগি পরিবারকে।

অ্যাডভোকেট এ কে এম নুরুজ্জামান কাশেমের নেতৃত্বে তদন্ত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন অ্যাডভোকেট রুহিন বালুজ, জাহিদুল ইসলাম সুইট, শহিদুল ইসলাম(এ জিপি), সঞ্জয় কুমার, অজিত সরকার, শান্তনু সরকার পল্টন।

তদন্ত শেষে টিমের পক্ষথেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, তারা ভুক্তোভোগি আলেয়া সুলতানা আলোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা সরেজমিন তদন্ত করেছেন। এসময় তারা জাকিয়া সুলতানা লাকি, আইনজীবী সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজ ও লাকির ভাইপো রাকিব হাসান ইমনের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু লাকি একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। সবুজ ও ইমনের বক্তব্যর সাথে লাকির বক্তব্যর মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া লাকি কয়েকটি প্রশ্নের সদোত্তর দিতে পারিনি। একই সাথে লিখিত ভাবে লাকি অভিযোগে জবাব দিতে সাতদিনের সময় নিয়েছেন বলেও জানানো হয়।

সর্বশেষ তারা বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে সর্বপরি উঠে আসে লাকি মুলত সুদেকারবারের সাথে জড়িত। তার সাথে একটি বাহিনী রয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে লাকি ও তার স্বামী সবুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এ বিষয়ে লাকির বক্তব্য, তিনি ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা ধার দিয়েছেন কিন্তু তা ফেরত না দেয়ায় মামলা করেছেন। সুদে কারবারের সাথে তার কোনো সম্পৃকত্তা নেই তার।

উল্লেখ, এ সংক্রান্ত্র সংবাদ প্রকাশ করায় যশোরের চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে মামলা করেন জাকিয়া সুলতানা লাকি। যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে।