এক বছর পর প্রতিবন্ধী হানিফ ফিরে পেল পরিবার

একুশ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হানিফ মিয়া। হারিয়ে গিয়েছিল এক বছর আগে। হারানো সন্তানকে খুঁজতে বহু জায়গায় ঘুরেছেন অসহায় বাবা-মা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাননি আদরের সন্তানকে। অবশেষে বাড়ি থেকে প্রায় ৫শ কিলোমিটার দুরে যশোরে খোঁজ মিলল হানিফের। ফেইসবুক পোষ্টের কল্যাণে সে খুঁজে পেল তার পরিবারকে। হানিফ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাঐর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমানের সন্তান।

হানিফের পরিবার জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে আত্মীয়-স্বজনসহ অনেক জায়গায় পাগলের মতো খুঁজেছি হানিফকে। অবশেষে রোববার (২৯ নভেম্বর) আদাঐর লোকনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল ইসলাম ফেইসবুকে তার ছবিসহ একটি পোষ্ট দেখে বিষয়টি তাদের জানায়। এর আগেও হানিফ দু’বার হারালেও দু’একদিনের মধ্যেই তাকে খুঁজে পেয়েছিল।

যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের আন্দোলপোতা গ্রামের ছবুর বিশ্বাস জানান, সাত মাস আগে একদিন দুপুরে হানিফ তার চায়ের দোকানে আসে। তখন পরিচয় জানতে চাইলে ‘ভাই মেরেছে, মা কাঁদছে, আব্বা কাঁদছে’ এই কথাটুকুই বলেছিল। তবে সে তার গ্রামের ঠিকানা ও বাবা-মায়ের নাম কখনো বলতে পারেনি। এ সময় হানিফের মুখের দিকে তাকিয়ে ছবুরের খুব কষ্ট লাগে। তখন সে তাকে নিজের কাছে রেখে নেয় এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানায়।

ইউপি চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন জানান, হানিফের ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি তার পরিবারকে খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তিনি তাকে ছবুরের দায়িত্বে দেন। সম্প্রতি ইউনিয়নের আন্দোলপোতা গ্রামের সজিব হোসেন ফেইসবুকে হানিফের ছবিসহ একটি পোষ্ট দিলে তা ভাইরাল হয়।

এদিকে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে হানিফকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় তার মা সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড, আইডি কার্ড ও থানার জিডির কপি দেখান। ইউপি চেয়ারম্যান মিলন তা যাচাই-বাচাই করে এবং বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হন। হস্তান্তরকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দীন বিশ্বাস, সম্পাদক দাউদ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক ও ময়না, চা বিক্রেতা ছবুরসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এ সময় চা বিক্রেতা ছবুর বলেন, তার দোকানসহ গোটা আন্দোলপোতা বাজার মাতিয়ে রাখতো হানিফ। এই এক বছরে সে সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ আমার মন খারাপ হলেও হানিফ তার পরিবারকে ফিরে পেয়েই এতেই আমি খুশি। এটা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে।

হারানো সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাবিয়া খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যে কষ্ট এতদিন বুকে বিঁধে ছিল তা আজ দূর হলো। এ সময় তিনি ছবুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তিনি আমাদের চিরদিনের আত্মার আত্মীয় হয়ে থাকবেন।