ফুলের রাজধানী গদখালির কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন

বিজয় দিবস, ইংরেজী নববর্ষ, আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালির ফুলচাষিরা। এখন তারা সময় পার করছেন ফুলচাষ ও পরিচর্যায়। এই সব দিবস উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রাম ও গদখালির মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, নানা জাতের গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসী, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা গোলাপের কুড়িতে সাদা ক্যাপ পরিয়ে রেখেছেন। কেননা সামনে রয়েছে ফুল বিক্রির ভরা মেৌসুম।

দিন কয়েক পর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, তারপর ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, ১৩ ফেব্রুয়ারী বাংলার ঐতিহ্যবাহী বসন্ত দিবস, পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়রি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশেষ দিবস। এসব দিবসে দেশব্যাপী থাকে ফুলের ব্যাপক চাহিদা। এ চাহিদা মেটাতে গদখালির মাঠে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ফুলচাষিরা।

ব্যবসায়ী ও ফুলচাষি আবু তাহের জানান, করোনা ও আম্ফান ঝড়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ৮ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছেন। ফুলচাষি লিয়াকত হোসেন বলেন, গোলাপ ও জারবেরা ফুল ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে তা হলে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
গদখালির কৃষকরা জানান, বর্তমানে ১০০ পিস রজনীগন্ধা ৭০০ টাকা, গোলাপ একশত পিস ৩০০-৪০০ টাকা, একশত জারবেরা ৯০০ টাকা, একশত পিস গাদা ২০০-২৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস একশত পিস ১১০০ টাকা, জিপসি প্রতি বান্ডিল ৫০ টাকা ও রড ষ্টিক প্রতি বান্ডিল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষক হারুনার রশিদ বলেন, দেশে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুল বিক্রি কমে গেছে অনেকটাই। এছাড়া যেসব জেলায় আগে ফুল যেত এখন সেখানে ফুল চাষ হচ্ছে। ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ফুল সংগ্রহের জন্য আসছেন না, এতে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এ ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। করোনা পরবর্তীতে কৃষক ও ব্যবসায়িদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের ঘোষিত কৃষি-প্রণোদনার ঋণের জন্য ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ধর্ণা দিয়েও ফুলচাষি ও ব্যবসায়িরা কোন অর্থিক সুবিধা পায়নি।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ছয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ হচ্ছে। ফুলচাষের সাথে সাত হাজার কৃষক ও এক লাখ শ্রমিক সম্পৃক্ত রয়েছেন।