চালের মূল্যবৃদ্ধিতে ‘মিলারদের কারসাজি’ দেখছেন কৃষিমন্ত্রী

abdur razzak
ফাইল ছবি

চালকল মালিকরা (মিলার) নানা কারসাজি করে বাজারে চালের দাম বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় থেকে ভার্চুয়ালি গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনে ভূমি উন্নয়ন ও পূর্ত কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান।

বর্তমানে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২/৩ বছর খাদ্যের (ধান/চাল) দাম অনেক কম ছিল। গত বছর বোরো ধান খুবই ভাল হয়েছিল, স্মরনাতীতকালে এমন ধান খুব কম হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে চলতি বছর বন্যায় আউশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমনও আমাদের একটি বড় ফসল। প্রায় এক কোটি ৫০ থেকে এক কোটি ৫৩ লাখ টন পর্যন্ত আমন হয়। এ বছর আমরা টার্গেট করেছিলাম আমনেও আমাদের উৎপাদন বেশি হবে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে বন্যায় আমাদের তিনবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এতে এক লাখ ৫ হাজার জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে, আমরা হিসাব করে দেখেছি ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধান আমাদের কম হয়েছে। এসব কারণে এখনো চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ধানের দামও বেশি। বিশেষ করে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম খুবই বেশি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি, বন্যা ও বৃষ্টি কারণে ভরা মৌসুমে আমনের দাম একটু বেশি। সরকার চেষ্টা করছে কোনোভাবেই যাতে রিকশাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা, নিম্ন আয়ের মানুষ, কম আয়ের মানুষ তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) চালু করেছে, অব্যাহতভাবে খোলাবাজারে চাল বিক্রি করছে।’

তিনি বলেন, ‘চাল উৎপাদনে ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমরা ৫-৬ লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করবো। সরকারি গুদামেও চাল কমে গেছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য ছিল সরকারি গুদামে। এবার সেটা কমে ৭ লাখ টনে নেমে এসেছে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই ৫-৬ লাখ টনের ঘাটতি যদি আমরা না মেটাতে পারি, বাংলাদেশের মিলাররা, বাংলাদেশের আড়তদাররা, জোতদাররা যারা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারা চালের দাম বাড়ায় এবারও তারা সেই কাজ করছে। এ মৌসুমের সময় এখনো তারা ধান কিনছে। ধানের দাম ও চালের দাম দুটিই তারা বাড়িয়ে দিয়েছে।’

‘আজকে আরেকটি নিউজ আপনারা দেখেছেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা যাবে। প্রাইভেট সেক্টরকে সেই সুযোগ দেয়া হবে। প্রাইভেট সেক্টর ও সরকার ৫/৬ লাখ টন চাল আনতে পারলে, এর বেশি হলে আমরা পারমিশন দেব না। যখনই ৬ লাখ টনের এলসি হয়ে যাবে তারপর আর কাউকে এলসি খোলার সুযোগ দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকেও আমার সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। আমরা যোগাযোগ রাখছি। ২৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে প্রাইভেট সেক্টরকে চাল আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অতটা চালের ঘাটতি আমাদের নেই। কিন্তু এ সুযোগে মিলাররা নানা কারসাজি করে চালের মূল্যবৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। আমরা যদি বিদেশ থেকে এনে চালের সরবরাহ বাজারে বাড়াতে পারি, আমার মনে হয় না খুব অসুবিধা হবে।’

আমদানির চাল আসা শুরু হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এলসি করছে, জিটুজি করেছি ভারতের সঙ্গে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকেও চাল আনার চেষ্টা করা হবে। সব মিলিয়ে সরকারের পূর্ণ উদ্যোগ রয়েছে। প্রস্তুতি রয়েছে চালের ঘাটতি মেটানোর জন্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খাদ্য নিয়ে তেমন কোনো কষ্ট হবে না। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’

তিনি বলেন, ‘সরকার চোখ বন্ধ করে থাকে না। প্রাইভেট সেক্টর ও সরকার চাল আমদানি করে ঘাটতি মেটাবে, যাতে একটি মানুষও কষ্ট না পায়। কোনো মানুষ যেন না খেয়ে থাকে, সেই নিশ্চয়তা আমি দিতে চাই।’

চাল আমদানিতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমনে যে খরচ হয়েছে তাতে কৃষকের লোকসান হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রতি মণ ধান এক হাজার টাকা বা ৯০০ টাকা বিক্রি করলেও কৃষকের লাভ হবে। এক হাজার ২ টাকা মণ ধান এটা অনেক বেশি। কাজেই কৃষক অসন্তুষ্ট হবে কিংবা তারা দাম পাবে না- এমন কিছু হবে না। কৃষক দাম পাচ্ছে আমরা খুশি।’

এ সময় কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।