বেসরকারি উদ্যোগে আসতে পারে চীন-রাশিয়ার টিকা

covid 19 vaccine

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরপরই বাংলাদেশে আসতে পারে চীন ও রাশিয়ার টিকা। সরকার নয়, ওই দুটি দেশ থেকে টিকা আনবে দেশের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ওই টিকা বাংলাদেশেও উৎপাদন করতে চায়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুটি পৃথকভাবে একদিকে সরকারের সঙ্গে, আরেক দিকে যেখান থেকে টিকা আনবে সেই কম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। যেকোনো সময় কম্পানি দুটি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে।

এ ছাড়া চীনের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে তাদের টিকার ট্রায়াল করারও প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সরকারের জায়গা থেকেও এতে অনানুষ্ঠানিক সম্মতি জুটেছে বলেও জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে। সূত্র অনুসারে চীনের আগে রাশিয়ার টিকা চলে আসতে পারে দেশে। এ ছাড়া অক্সফোর্ডের টিকা বাংলাদেশেও উৎপাদনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে দেশীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

রাশিয়া ও চীনের টিকা দেশে আমদানি ও উৎপাদন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে আসতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটির কেউ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পরই তাঁরা বিষয়টি জানান দিতে চান।

এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া ও চীনের টিকা প্রাইভেট সেক্টর থেকে নিয়ে আসার ব্যাপারে কিছু কাজ হচ্ছে। তবে তা আরো কিছুটা অগ্রগতির পর ওপরের স্তর থেকে জানান দেওয়া হতে পারে।

তবে অক্সফোর্ডের টিকা দেশেই তৈরির বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলেন, ‘আমরা দেশেই অক্সফোর্ডের টিকা উৎপাদনের জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। তবে এখন আমরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আনার চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। ওই টিকা দেশে এসে গেলেই আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা হিসেবে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাব।’

বেসরকারি একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতে টিকা আনার ব্যাপারে উৎসাহ না দেখালেও সম্প্রতি প্রাইভেট সেক্টরকে টিকা আমদানির জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে দুটি শর্ত দেওয়া হয়। একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেকোনো এক বা একাধিক সংস্থা থেকে অনুমোদিত টিকা আমদানি করতে হবে। অন্য শর্ত হচ্ছে, বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট কমিটিরও অনুমোদন থাকতে হবে। সরকারের তরফ থেকে আহ্বান জানানো বা উৎসাহ দেখানোর পর নতুন করে বেসরকারি খাত থেকে টিকা আমদানির ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে ওঠে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর আগে প্রথম দিকে কোনো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিকা আনার জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করলেও তখন সরকার সায় দেয়নি বলে প্রতিষ্ঠানগুলো পিছু হটে।

এদিকে অক্সফোর্ডের টিকা দেশে নিয়ে আসার অগ্রগতি বিষয়ে বেক্সিমকোর রাব্বুর রেজা বলেন, ‘এখন যেকোনো সময় যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ডের টিকা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এই অনুমোদন হয়ে গেলেই বাকি থাকবে কেবল ভারতের অনুমোদন। তারপর আর কোনো বাধা থাকবে না। আমাদের দেশে যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া বাকি থাকবে, সেটা হয়তো দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার নিজেদের উদ্যোগেই সেরে ফেলবে। ফলে এরপর কেবল অল্প কিছু প্রক্রিয়ার পরই দেশে টিকা নিয়ে আসতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘এ জন্য বাকি সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা আছে। এ ক্ষেত্রে সরকার আমাদেরকে যেভাবে বলবে, সেভাবেই আমরা বিমানবন্দর থেকে টিকা সারা দেশে সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত আছি। হয়তো একই দিনে সারা দেশে টিকা যাবে না, তবে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঠানোর বিষয়ে আমাদেরকে জানিয়ে রাখা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) ডা. শামসুল হক বলেন, ‘যেদিন দেশে প্রথম টিকা আসবে, সেদিনই হয়তো সারা দেশে না-ও পাঠানো হতে পারে। হয়তা বিভাগওয়ারি পাঠানো হবে। যদিও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই টিকা পরিবহনের জন্য বিশেষায়িত কাভার্ড ভ্যান সংগ্রহ করেছে। এ ছাড়া তাদের স্টোরও বিশেষায়িত করা হয়েছে। ফলে সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার আশঙ্কা নেই। তবে যুক্তরাজ্যে ও ভারতে অনুমোদনের পর বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনে কতটুকু সময় লাগবে সেটা এখনই বলা যায় না।’