যশোরে ক্রিমে এসিড মিশিয়ে গৃহবধুকে নির্যাতন, জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

jessore map

বিয়ের পরের দিন স্বামী নামের মানুষটার বিদেশ গমন। তার পর থেকে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রাম করলেও দেওয়া হয় না পেট পুরে দু’মুঠো খাবার। বাধ্য হয়ে ফেলে দেওয়া হাঁসের খাবার খেয়ে কেঁটে গেছে আড়াই বছর। এত দিনে নির্যাতন বেড়েছে। ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছে হাত। মুখে গামছা বেঁধে পিটিয়েছে দিনের পর দিন। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সব সর্য্য করে যাচ্ছিলেন। তবে শেষ রক্ষা আর হল না। প্রসাধনীর ক্রিমে ঝালের গুড়ো মিশিয়েও সাধ মেটেনি নির্যাতকদের। সর্বশেষ ক্রিমে এসিড মিশিয়ে বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে এক গৃহবধুর।

নাটক, সিনেমার গল্পের মতো শোনারেও বাস্তবে ঘটেছে যশোর সদর উপজেলার ঘুনী গ্রামের শাখারীপাড়ায় নাসরিনের সাথে। ননদরূপি চাচাতো বোন আসমা খাতুন এই নির্যাতন চালায়। আর সহযোগিতা করেন ছোট বোন রেনু।

২০১৮ সালের ২৮ মে ৫০ হাজার টাকা দেনমহরে বিয়ে হয় নূর ইসলামের মেয়ে নাসরিন খাতুনের। একই গ্রামের জাফর ব্যাপারীর তৃতীয় ছেলে চাচাতো ভাই ফিরোজ ব্যাপরীর। বিয়ের পর দিনই কর্মী ভিসায় দুবাই চলে যান স্বামী ফিরোজ ব্যাপারী। এর পর থেকে নেমে আসে নির্যাতন। বর্তমানে স্বামীর সাথে যোগাযোগও নেই নাসরিনের।

নির্যাতিত নাসরিন খাতুন বলেন, ননদ নামে দু’বোনের ধারাবাহিক অত্যাচারে আমি বুঝতে পারি বিয়েটা একটি উপলক্ষ মাত্র। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনা বেতনে কাজের লোক হিসাবে ব্যবহার করা।

নাসরিন বলেন, মৃত পিতার উপর প্রতিশোধ নিতে তাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে। সরাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করার পরও কোনদিন তাদের প্রিয় হতে পারেননি। নির্যাতনের পাশাপাশি খেতে দিতো না তাকে। ফলে ক্ষুদার জ্বালায় হাঁসের দেওয়া কুড়া মেশানো ভাত খেতে হয়েছে তাকে। পরতে হয়েছে ননদদের পুরানো জামা-কাপড়। শীতের সময়ও দেয়া হয়নি গরম কাপড়। সর্বশেষ, প্রসাধনী ক্রিমে এসিড মিশিয়ে মুখমন্ডল বিকৃত করে দিয়েছে তারা।

নাসরিন বলেন, এসিডের যন্ত্রণায় আমি যখন চিৎকার করে কাঁদছি তখন তারা পাশের ঘর থেকে পৈশাচিক উল্লাসে মেতেছে আসমা ও তার পরিবার।

চোখের পানি মুছতে মুছতে নাসরিন বলেন, তার জীবনটা কেন এমন হলো! কী অপরাধ ছিল তার? দরিদ্র আর পিতৃহীন পাগল মাকে নিয়ে ন্যায় বিচার পাবেন?

ফিরোজ ব্যাপরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, আমাকেও একই রকম নির্যাতন করেছিল। আমার স্বামী পরে আমাকে আলাদা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। তারপরও এখনও বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে যাচ্ছে।

জেসমিন বলেন, আমার শ্বাশুরের চার ছেলে। তার মধ্যে একজন চোখে সমস্যা। সে বাড়ি থাকে বাকি তিনজন বিদেশে থাকে। তার মধ্য দুই জনে স্ত্রী নির্যাত সয্য করতে না পেরে চলে গেছে। বাকি ছিল ছোট ছেলের বউ। তাকেও নির্যাতন করে বাড়ি ছাড়া করেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, লোকমুখে খবর পেয়ে আমি এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নাসরিনকে ঐ বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের হস্থ্যক্ষেপ কামনা করেন।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে আসমা খাতুন ও তার পরিবারের কাহকে বাড়ি পাওয়া যায়নি।