মোদির ঢাকা সফরের আগেই স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও পানি সচিবের বৈঠক

বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন বা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে শুক্রবার।

দিনের প্রথমার্ধে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকটির মুখ্য আলোচ্য ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগামী মার্চের বাংলাদেশ সফরকে অর্থবহ করার বিষয়টি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে অংশ নিতে আসছেন মোদি। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে অত্যাসন্ন সফরে কোনো সুরাহার আশা করা যায় কি-না? সফরের আগে ভারতের তরফে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না? পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দিল্লির বিমানে ওঠা অবধি সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ঢাকার সাংবাদিকরা। জবাবে মোমেন কূটনৈতিক জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, বল এখন ভারতের কোর্টে। তিস্তার পানি নিয়ে দেশটির কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে বোঝাপড়া চলছে অনেক দিন ধরে। সেই বোঝাপড়ায় কোনো অগ্রগতি আছে কিনা বা চুক্তিটি সইয়ের জন্য দিল্লি আর কত সময় নিতে চায়, তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

এখানে ঢাকার অপেক্ষা ছাড়া যে আর কিছুই করার নেই সেটা পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা করেন সচিব মোমেন। সফরের প্রথম দিনেই তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। অবশ্য ওই সাক্ষাৎ বিষয়ে যে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে তাতে তিস্তার বিষয়টি ছিল পুরোপুরি অনুপস্থিত।

আর এজন্য শুক্রবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শ্যেনদৃষ্টি ছিল ঢাকার। সেই বৈঠকে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, যিনি বাংলাদেশে পূর্ণ মেয়াদে সফলতার সঙ্গে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শ্রিংলা-মোমেন বৈঠকের বিষয়ে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের একটি ভাষ্য পাওয়া গেছে। তাতে অনেক ইস্যুতে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সেখানেও তিস্তার বিষয়টি স্থান পায়নি।

দিল্লির বিজ্ঞপ্তি মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চের বাংলাদেশ সফরের আগেই পানি সম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ওই সফরের আগে স্বরাষ্ট্র এবং বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বসতে রাজি হয়েছে দুই পক্ষ। বৈশ্বিক মহামারির কঠিন সময়ে ভ্যাকসিন এবং কোভিড মোকাবিলার সামগ্রী দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সিরিজ আলোচনা হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যেভাবে গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে তাতে ফরেন অফিস কনসালটেশনে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে চলতি বছরে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন নিয়ে কথা হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর যৌথ উদযাপন নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই কোভিড-১৯ সহযোগিতা, বাণিজ্য, সংযোগ, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি সীমান্ত পরিচালনাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অগ্রগতির ব্যাপক পর্যালোচনা করেছে। সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষই কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেছেন, এরমধ্যে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি অনুসরণ করে দেশটি ২ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী, দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন প্রসঙ্গে ২০২১ সালের গুরুত্ব বোঝার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষ চলমান সমন্বয়কে আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রসঙ্গে বৈঠকে ২০২১ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ ট্রাই-সার্ভিস মার্চিং কন্টিজেন্টের অংশ নেয়ার বিষয়টি প্রশংসার সঙ্গে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনী এবং জনগণের ত্যাগের বিষয়টি উভয় দেশের বর্তমান প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এই অনুষ্ঠানের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। বৈঠকে ভারতীয় ঋণে বাংলাদেশি প্রকল্পগুলোর সহজ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী ঘুরে দেখবেন। একইসঙ্গে তিনি ভারতীয় ফরেন সার্ভিসের ট্রেইনি অফিসারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যও দেবেন।