বিক্ষিপ্ত সহিংসতা-বর্জনে সম্পন্ন তৃতীয় ধাপের ভোট

ব্যালট পেপার ছিনতাই, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা, গোলাগুলির মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কারচুপির অভিযোগ তুলে নাটোরের সিংড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর ও কটিয়াদী এবং সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।

শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলে। এই ধাপে সব পৌরসভায়ই ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হয়। এখন চলছে গণনা। রাতের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রথম দুই ধাপে গোলযোগ-সংঘর্ষ হওয়ায় তৃতীয় ধাপে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার কথা নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হলেও থামানো যায়নি সহিংসতা। সহিংসতায় তিনজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা। দফায় দফায় চলা এই সংঘর্ষে তিন জন গুলিবিদ্ধসহ পক্ষ দুটির ২০ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে পশ্চিম কাজিরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচন চলাকালীন এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানায়, বেলা ১১টার দিকে পৌর ৬নং ওয়ার্ডের উটপাখি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের কর্মী সমর্থকরা দলবল নিয়ে পশ্চিম কাজির খিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে যায়। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঞ্জাবি প্রতীকের মামুনুর রশিদ আকন্দের সমর্থকদের বাধা দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে আলমগীর, কামাল হোসেন ও জামসেদ নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সর্বমোট ২০ জন আহত হন।

খবর পেয়ে চট্টগ্রাম পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বিপিএিম (বার), পিপিএম এর নেতৃত্বে বিপুল বিডিআর, র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ চালিয়ে হামলাকারীদের চত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফেনী পৌরসভায় একটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

এছাড়া, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর এজেন্টসহ তিনজন আহত হয়েছেন। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌরসভায় ব্যালট ছিনতাই অভিযোগে তিন চেয়ারম্যানসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের নারীসহ ১০ জন আহত আহত হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে পৌরসভার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পানির বোতল প্রতীকের আনোয়ার হোসেনের সমর্থকরা জালভোট দেয়া শুরু করে। পরে বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী উটপাখি প্রতীকের জাহিদুল ইসলামের সমর্থকরা প্রতিবাদ করে। এক পর্যায়ে জাহিদুলের এজেন্টসহ সমর্থকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এসময় আনোয়ার গ্রুপের লোকজন জাহিদুল ইসলামের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় জাহিদুলের পক্ষের নারীসহ ১০ জন আহত হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে এ দফায় নির্বাচন শুরুর আগে পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অতিরিক্ত সংখ্যক নিয়োজিত রাখা এবং বিজিবির প্লাটুন বাড়ানোর কথা ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তবে, নির্বাচনের দিন কমানো যায়নি সহিংসতা।

তৃতীয় দফায় মেয়র পদে সব মিলিয়ে মোট ১০টি দলের প্রার্থী ছিলেন। এই ধাপে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

তৃতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৩৪৪ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৬০ জন। ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৩ হাজার। মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৯৯টি, কেন্দ্র সংখ্যা ৮৫৪।

সূত্র: ঢাকা টাইমস