ঝিনাইদহে এশিয়ার বৃহত্তম বটবৃক্ষটি রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে ধ্বংসের পথে

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামে এশিয়ার বৃহত্তম প্রাচীন ঐতিহ্য বটবৃক্ষটি অবস্থিত। প্রায় ৪’শ বছরের পুরোনো এই বট গাছটি নষ্ট হতে বসেছে রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে। ২০০৯ সাল হতে যশোর সামাজিক বন বিভাগ রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব নিলেও জমি অধিগ্রহনসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডের কোন অগ্রগতি নেই। গাছটির চার পাশে চলাচলের রাস্তার হওয়ার কারণে দিন দিন মারা যাচ্ছে গাছটি।

এ অবস্থায় এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও গাছটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিনে কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী গ্রামের মৌজায় জন্মালেও দেশ বিদেশে এটা সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৫ একর জমির ওপর বেড়ে উঠা এ বৃক্ষটির ডাল পালা বয়সের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেথুলী গ্রামের একটি কুয়ার পাশে জন্মায় গাছটি। এটি রোপন করা হয়েছিল বা এমনিতেই জন্মেছে তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসীর ধারনা আজ থেকে প্রায় চার’শ বছর আগে কোন উড়ন্ত পাখির মুখ থেকে পতিত ফলেই জন্ম হতে পারে এ বৃক্ষের।

বনবিভাগ হতে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, অতীতে বেশি জায়গা জুড়ে বৃক্ষটি বিস্তৃত থাকলেও এখন আছে ২.০৮ একর জুড়ে। এ বৃক্ষের মোট ৩৪৫ টি বায়বীয় মূল রয়েছে। যে মূল গুলো মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে। আর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে ৩৮ টি মূল। যে বৃক্ষটি দেখার জন্য প্রতিদিন দেশ বিদেশের অসংখ্য মানুষ ভীড় জমায় ঐতিহ্যবাহী এ বৃক্ষটির তলে। প্রকৃতি প্রেমিক দর্শনার্থীরা শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে এ অজ পাড়াগায়ের এ বৃক্ষের তলে এসে কোকিল, ঘুঘু, টিয়া, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেকে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলেন। তবে বটবৃক্ষটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। বৃক্ষটিকে তিন দিকে লোকচলাচলের রাস্তায় চেপে ধরেছে। ফলে বেড়ে উঠতে পারছেনা আপন গতীতে।

২০০৯ সাল হতে সামাজিক বন বিভাগ যশোর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব নিলেও জমি অধিগ্রহনসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডের কোন অগ্রগতি নেই।

স্থানীয় রাড়িপাড়া গ্রামের এম এ জলিল জানান, বিভিন্ন সময়ে অনেকে সরকারী ভাবে বটগাছের উন্নয়নের কথা শুনিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দুর থেকে আসা দর্শণার্থীদের কল্যানে ১৯৮৫ সালে নির্মিত রেস্ট হাউজটি যার তত্ত্বাবধানকারী জেলা পরিষদ সেটা আজ ধবংসের দ্বার প্রান্তে। পরে নতুন একটি রেষ্ট হাউজ নির্মিত হয়েছে কিন্তু দেখ ভালে নিয়োজিত ব্যক্তি অধিকাংশ সময় থাকেন না। এলাকার মানুষের নজরদারিতে দীর্ঘদিন ধরে গাছটি বেঁচে আছে। সরকারী ভাবে যতটুকু করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। একটি পুর্ণাঙ্গ পিকনিক স্পট করতে পারলে এ এলাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। রক্ষা হবে এলাকার ও দেশের একটি দর্শনীয় স্থান।

স্থানীয় মোশারফ হোসেন মাষ্টার জানান, ছোট বেলা থেকে দেখ আসছি মল্লিকপুর ও বেথুলী পাশাপাশি গ্রাম দুটির মানুষের মধ্যে বট গাছে। বর্তমানে এ এলাকার আশ পাশের ১৫/২০ গ্রামের মানুষেরা বলে এটা আমাদের সকলের সম্পদ। সব মানুষের কথা বট বৃক্ষটির রক্ষণাবেক্ষন এবং স্থানটির উন্নতি হওয়া দরকার। বর্তমান রেষ্ট হাউজটি সাধারন দর্শনার্থীদের কোন কল্যানে আসে না। বৃক্ষটির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বন বিভাগ সরকারের উচ্চ মহলে ধরনা দিয়েছেন কিন্তু তেমন একটা লাভ হয়নি।

ঝিনাইদহ জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা খোন্দকার মোঃ গিয়াস উদ্দীন জানান, আগে সরকারী ভাবে খাস ল্যান্ডে ছিল। পরর্বতীতে বন বিভাগ দেখলো এটা রক্ষনাবেক্ষন করার দরকার ছিল অনেক আগেই। কারন এটা এশিয়ার সেরা বটগাছ। পরে জেলা প্রশাসন থেকে বন বিভাগের তত্বাবধায়নে নিয়েছে। ইতি মধ্যে সেখানে উন্নয়ন মূলক কিছু কাজ করা হয়েছে। সেখানে দেখা শোনার জন্য আমাদের লোক আছে।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি ব্রাক হাউজ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া ওই স্থানটি আরো ভালো করার জন্য বন বিভাগ একটি প্রকল্প উপরে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে একটা পর্ষটন কেন্দ্রসহ একটি পুর্ণাঙ্গ পিকনিক স্পট হতে পারে।