বিভিন্ন জাতি, ধর্মের মানুষ মিয়ানমারের রাজপথে

জাতিগত সংখ্যালঘু, কবি, পরিবহন শ্রমিক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে অভ্যুত্থানবিরোধী অব্যাহত বিক্ষোভে আজ শনিবারও মিয়ানমারের রাস্তায় নেমেছেন। তারা সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরে চাইছেন। মুক্তি দাবি করছেন বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট সহ সব রাজবন্দির। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

খবরে বলা হয়, গত ১লা ফেব্রুয়ারি গণতান্তিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচিকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারেরে সামরিক বাহিনী। তারা জারি করে এক বছরের জরুরি অবস্তা। রাজপথে বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমন করতে নামানো হয় সাজোয়া যান। কিন্তু কোনো কিছুতেই, বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরাতে পারছে না।

সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা নতুন একটি নির্বাচন দেবে। বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। কিন্তু তাদের সেই আশ্বাসের বাণীতে কোনোই ভরসা নেই নাগরিকদের। আজ শনিবার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে শিপইয়ার্ডের শ্রমিকদের বিক্ষোভে রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে একজন সামান্য আহত হয়েছেন। ওদিকে গত সপ্তাহে সরাসরি গুলি করা এক যুবতী শুক্রবার এক হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে আগামীকাল রোববার। বিক্ষোভ শুরুর পর এটাই মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে প্রথম মৃত্যু। তবে সেনাবাহিনী বলেছে, বিক্ষোভ থেকে আহত একজন পুলিশ সদস্য মারা গিয়েছে এ পর্যন্ত। তবে বিক্ষোভে অংশ নেয়া ওই যুবতীর মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দুঃখ প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ কথা বলেছেন।

শুক্রবার মারা যাওয়া যুবতীর প্রতি প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে তরুণ তরুণীকে শনিবার ফুলের তোড়া ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। রাজধানী ন্যাপিডতে এক বিক্ষোভে প্রতিবাদকারী ছাত্র খিন মাও মাও ও বলেছেন, মিয়া থাত থাত খাইংয়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার মৃত্যুর শোককে আমরা সাহস হিসেবে নিয়েছি। নাগা সম্প্রদায়ের এক তরুণ নেতা কে জাং বলেছেন, আমাদেরকে এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। আমরা জনগণের পাশে আছি। স্বৈরশাসকের পতন না ঘটা পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।

এক বিক্ষোভে ৯ই ফেব্রুয়ারি রাজধানী ন্যাপিডতে অংশ নিয়েছিলেন মিয়া থাত থাত খাইং। সেখানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শক্তি প্রযোগ করে। তবে তারা প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার বলেছে, তারা এ ঘটনার তদস্ত করবে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেছেন, আরো দু’জন বিক্ষোভকারীর শরীরে সরাসরি গুলি লেগেছে।

মিয়া থাত থাত খাইংয়ের বোন মিয়া থা টোয়ে নয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা এই সামরিক জান্তার কবল থেকে যতদিন মুক্তি না পাব, ততদিন বিক্ষোভে যোগ দিতে সব নাগরিককে উদ্বুদ্ধ করছি। আমার চাওয়া এটাই। নিহত মিয়া থাত থাত খাইং ছিলেন একটি সুপারমার্কেটের কর্মী। ন্যাপিডর বিক্ষোভে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। মিয়া থাত থাত খাইং ভাই তাকে বিক্ষোভে যোগ দিতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি যে নেশা তা মিয়া থাত থাত খাইংকে ঘরে বন্দি করে রাখতে পারেনি। ইয়েজিন গ্রাম থেকে তিনি তার বোনদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। পুলিশ গুলি করতে পারে- তাই তাকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন তার ভাই। কিন্তু ফোনে ভাইকে তিনি বলেছিলেন- না, পুলিশ গুলি করবে না। কিন্তু সে কথ্যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।