সু চিকে ৫ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন, দাবি ব্যবসায়ীর

suchi

সরকারি সুবিধা পেতে অং সান সু চিকে পাঁচ লাখের বেশি ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের নির্মাণখাতের প্রভাবশালী এক টাইকুন। দেশটির সরকারি টেলিভিশনে ব্যবসায়ীর এমন দাবির পর হইচই শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১১ মার্চ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জ মিন তুন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন, সরকারে থাকা অবস্থায় অং সান সু চি বিধি বিধি বহির্ভূতভাবে স্বর্ণ এবং ৬ লাখ ডলার আত্মসাত করেছে। ইয়াঙ্গুনের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফিয়ো মিয়েন থিয়েন এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী এমন অভিযোগ তোলে। দুর্নীতি বিরোধী কমিশন বিষয়টি তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

অবশ্য মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আনা সামরিক বাহিনীর এই অভিযোগ প্রত্যাখান করেন সু চির আইনজীবী ‘খিন মাং জ’। এএফপি নিউজ এজেন্সিকে তিনি জানিয়েছিলেন, স্টেট কাউন্সেলর সু চির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বিশেষ করে ডলার এবং সোনার বার আত্মসাৎ করার অভিযোগ। এটা সবার জন্য একটি হাস্যকর কৌতুক। তিনি বলেন, আমি এমন বিধিবহির্ভূত কলঙ্কময় অভিযোগ দেখিনি। তার অন্য দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু নৈতিকভাবে তার (সু চির) কোনো দুর্বলতা নেই। অন্য দুর্বলতা বলতে সু চির আইনজীবী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নে সু সুচির চুপ থাকাকে উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নিপীড়নে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

ব্যবসায়ী আনা অভিযোগের বিষয়ে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, এই অভিযোগ গৃহবন্দী অং সান সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও গুরুতর অভিযোগ গঠনে সেনাবাহিনীকে সুযোগ করে দিবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করছে। নিরাপত্তা বাহিনী সহিংসভাবে বিক্ষোভ দমন করছেন। এর মধ্যে সেনাশাসকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই ব্যবসায়ী এমন অভিযোগ আনলেন।

সু চি বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খলায় উসকানি, অবৈধভাবে ওয়াকি-টকি আমদানি এবং ব্যবহার ও করোনা মহামারির সময় জনসমাগমের বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

সু চির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ আনা ব্যবসায়ী মং ওয়াইক অতীতে মাদক পাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে মিয়ানমারের এই ব্যবসায়ী বলেন, ২০১৮ সালে সু চির মায়ের নামে করা একটি দাতব্য সংস্থাকে এক লাখ ডলার দেন তিনি। এছাড়া পরের বছর তাকে আরও দেড় লাখ ডলার দেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আরও ৫০ হাজার এবং এপ্রিলে আড়াই লাখ ডলার সু চিকে দেন। এই অর্থ কেন সু চিকে দিয়েছিলেন সেবিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও কারণ জানাননি মং।

এদিকে, বুধবারও মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) বলছে, বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে মোলোতোভ ককটেল ও গুলতি ছুড়েছেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত নেতাদের বন্দী করে সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করে। সেই থেকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে ১৮০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। তবে হত্যা নির্যাতন উপেক্ষা করে দেশটির সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে, অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর সহিংসতায় ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।