মামুনুলকে নিয়ে শেখ হাসিনা যা বললেন ও হেফাজত যে জবাব দিল

বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে শনিবার নারায়ণগঞ্জের এক রিসোর্টে যে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা নিয়ে রোববার জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে তিনি মামুনুল হক, তার কর্মকাণ্ড ও হেফাজতে ইসলামের তীব্র সমালোচনা করেন।

প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যের একটি বড় অংশ জুড়ে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে ধরণের বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, শনিবার মামুনুল হক ‘অপবিত্র কাজ করে সোনারগাঁও এর রিসোর্টে’ ধরা পড়েছেন।
“এরা ধর্মের নামে এত কথা বলে, পবিত্রতার নামে এত কথা বলে, এখন অপবিত্র কাজ করে সোনারগাঁও এর রিসোর্টে ধরা পড়েছে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এখন সেটা ঢাকার জন্য নানা রকম চেষ্টা করছে তারা।”

তবে মামুনুল হক পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী না জেনে অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন’। আর হেফাজতে ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তারা ‘বিব্রত ও হতভম্ব’।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে শনিবার নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

পরে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা পাল্টা হামলা চালিয়ে সেখান থেকে তাকে নিয়ে যায় বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

সোনারগাঁও থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সোনারগাঁও এলাকায় অবস্থিত একটি রিসোর্টে শনিবার বিকেলে মামুনুল হককে ঘেরাও করে রাখে স্থানীয় কিছু লোকজন এবং ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছেন।

অন্যদিকে মামুনুল হক দাবি করেছেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে ঘুরতে গিয়েছেন।

এক পর্যায়ে পুলিশও সেখানে উপস্থিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার ভাষণে বলেন, “এত আগুন জ্বালাও-পোড়াও করে তিনি (মামুনুল হক) বিনোদন করতে গেলেন রিসোর্টে, একজন সুন্দরী মহিলা নিয়ে। এরা ইসলাম ধর্মের নামে কলঙ্ক। এরা ইসলাম ধর্মকে ছোট করে দিচ্ছে।”
“এরা ধর্মকে কলুষিত করে দিচ্ছে, ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। বিনোদনের এত অর্থ কোথা থেকে আসে?” এমন প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করা এবং ধর্মের নাম নিয়ে ‘অধর্মের’ কাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আগুন নিয়ে খেলছে তারা’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানমালায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকদিন ধরে চলা সহিংস বিক্ষোভের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় সংসদ টিভির পর্দায় ২৬, ২৭ এবং ২৮শে মার্চ দেশের বিভিন্ন জেলায় হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিকাণ্ডের ছবি প্রদর্শন করা হয়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “ভারত নিয়ে তাদের আপত্তি, তারা শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেওবন্দে যায় না?”

মোদী বিরোধী বিক্ষোভে হেফাজতের তাণ্ডবের পেছনে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী জড়িত বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আগুন নিয়ে খেলছে তারা। এক ঘরে আগুন লাগলে তো সেই আগুন অন্য ঘরেও চলে যেতে পারে, সেটা কি তাদের হিসাবে নেই”?

“আজকে রেল স্টেশন থেকে শুরু করে ভূমি অফিস থেকে ডিসি অফিস থেকে শুরু করে সবখানে যে আগুন দিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের মাদ্রাসা, তাদের বাড়িঘর সেগুলিও যদি আগুন লাগে তারা কী করবে? জনগণ কি বসে বসে এগুলি খালি সহ্য করবে?”

হেফাজতে ইসলামের নিন্দা:
শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদ করে হেফাজতে ইসলাম বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।

এর বাইরে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ফেসবুক লাইভ করে রোববার দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার সম্পর্কে না জেনে ‘অসত্য’ মন্তব্য করেছেন।

এছাড়া রিসোর্টে নিজের সাথে থাকা নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে বলেছেন, “সে শরীয়তসম্মত উপায়ে, হালাল উপায়ে আমার বৈধ স্ত্রী”।

যারা ‘মিথ্যা’ তথ্য দিচ্ছে তাদের ওপরও আল্লাহর গজব পড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, এর আগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়সাল বিবিসিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ‘বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য পেয়ে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।

দলটি প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।

মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, “একজন প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত না হয়ে, মিথ্যা সংবাদ শুনে এবং সুপার এডিটিং করে যে সমস্ত ভিডিও গতকাল প্রচার হয়েছে, সে কথা শুনে তিনি জাতীয় সংসদে যে কথা বলেছেন, তাতে আমরা বিব্রত এবং হতভম্ব।”

বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বসে প্রতিবাদ কর্মসূচী নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা