ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা: হুইপপুত্র শারুনসহ দোষীদের বিচার দাবি

চট্টগ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করার অভিযোগে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরীসহ জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান আত্মহত্যাকারী ব্যাংকারের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী। এ সময় তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যে ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘শারুনের পার্টনার পারভেজ সাকিব গং আমার স্বামীকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তার বিপরীতে মোর্শেদ তাদের প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তা সত্ত্বেও শারুন চৌধুরীর সেই সহযোগিরা অলিখিত চেক ও স্ট্যাম্পের ভয় দেখিয়ে আরও টাকা দিতে চাপ দেয়। নানাভাবে হুমকি দেয়। ফ্ল্যাটে হামলা চালায়। পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। জীবনযাত্রা সংকুচিত করে ফেলে। অতিষ্ট হয়ে মোর্শেদ দেশত্যাগ করতে চাইলেও তাদের কারণে সফল হননি। ফলে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’

ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রী বলেন, ‘সুইসাইড নোট অনুযায়ী আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে মামলায় অভিযুক্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল ও নাইম উদ্দিন সাকিব। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে শারুন চৌধুরী ও আরসাদুল আলম বাচ্চু গং-দের নামও উঠে আসে।’

শারুনের সঙ্গে এই লেনদেন নিয়ে মোর্শেদের কথা হয়। ব্যবসায়ী আজম খানের উপস্থিতিতেও শারুন, সাকিব, পারভেজ, জাভেদ গংয়ের বৈঠক হয় উল্লেখ করে এই শিক্ষিকা বলেন, ‘শারুন চৌধুরী ফোন করে মোর্শেদকে চট্টগ্রামের রেডিসন হোটেলে দেখা করতে বলেন। শারুন সরাসরি বিনিয়োগ না করেও কেন সাকিব-পারভেজের হয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, চাপ প্রয়োগ করছেন, তা জানতে চেয়েছিল আমার স্বামী মোর্শেদ। মোর্শেদ জানতে চেয়েছিল, ‘আপনার সঙ্গে তো কোনো লেনদেন নেই। আপনি কেন মাঝখানে কথা বলছেন?’ পাল্টা উত্তরে শারুন চৌধুরী বলেন, ‘লেনদেন আছে কি নেই, তা নিয়েও এখন কথা হবে। আগে আসেন। মিট করেন।’

‘রেডিসনে যাওয়ার হুমকির রাতে ২৯ মে ২০১৯ তাদের ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ উভয় ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে।’

ওই রাতে ব্যবসায়ী আজম খানের বাসায় মোর্শেদকে ডেকে নেয়া হয়, সেখানে শারুনও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ইশরাত। তিনি বলেন, ‘শারুনের সহযোগী ছিলেন শহীদুল হক চৌধুরী, রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল ও তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাঈম উদ্দিন সাকিব। আত্মীয় হিসেবে এমপি দিদারুল আলম মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন। শারুন ও পারভেজ না আসায় তা সম্ভব হয়নি। শারুন চৌধুরী ও তার বন্ধুরা মোর্শেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ আত্মহত্যা প্ররোচনার মধ্যে পড়ে।’

‘২০১৮ সালের মে মাসে সাকিবের বাবা এনসিসি ব্যংক চেয়ারম্যান এম আবু মহসিন তাদের পাঁচলাইশ এমএম টাওয়ারে মোর্শেদকে ডেকে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন করে। ওই দিন জোরপূর্বক স্ট্যাম্প ও অলিখিত চেকে সই নেয়। মোবাইল ও পাসপোর্ট কেড়ে নেয়।’

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ২০১৯ সালে ২৯ মে চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক শারুন চৌধুরীকে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে ১০-১২ জন যুবক বাসায় আসেন। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফটে করে ওপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকে। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকে তারা। নিজের ও শিশুকন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্যপ্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। ভীত হয়ে পালিয়ে আমরা নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেই। সহযোগিতা চাই পুলিশের কাছে। থানায় জিডিও করি, কিন্তু শেষরক্ষা পাননি মোর্শেদ। চাপ সইতে না পেরে দেশ ছেড়ে জাপান চলে যেতে চাইলে, তারা খবর পেয়ে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। এভাবে তার আত্মরক্ষার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।

ডিআরিইউতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রীর সঙ্গে মা নুর নাহার ও কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুমও উপস্থিত ছিলেন।