‘বাবুনগরীদের আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না’

jahangir kabir nanok
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলার জমিনে যোগ্য নেতার যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের দোসররা আবারো সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্প ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে মৌলবাদের শেকড় যত গভীরেই থাক তা উপড়ে ফেলে বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা হবে। বাবুনগরীদের আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। ইসলামকে হেফাজতের নামে যার মাদ্রাসাকে কলঙ্কিত করে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে যারা অবমূল্যায়ন করে তাদের থেকে সজাগ থাকতে হবে।

সোমবার দুপুরে বগুড়ার শেরপুরের বালেন্দা গ্রামে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর ধান কাটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবীর নানক এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে ও কৃষক লীগের সভাপতি শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উপদেষ্টা সমীর চন্দের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সিআইপি ও শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ ব্যতিক্রমী আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া ‘শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়। শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের তত্ত্বাবধানে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে ১০০ বিঘার পুরো ক্যানভাসে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’র সেই ক্ষেতের উজ্জীবিত ধান পরিপক্ক হওয়ায় ২৬ এপ্রিল সোমবার সকালে ধান কাটার মধ্য দিয়ে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর ইতি টানা হয়েছে।

১০০ বিঘা ধানক্ষেতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি গত ১৬ মার্চ সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র (লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক) ক্যাটাগরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়।

স্থানীয়রা জানায়, শেরপুর উপজেলায় বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ ক্ষেতের ১০০ বিঘা জমির গাঢ় বেগুনি ও সবুজ ধানগাছে শীষের ভারে নুয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ পরিপুষ্ট ধান আর গাছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বর্তমানে সবুজ আর বেগুনি গাছে ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগেই শস্যক্ষেত থেকে ধান কাঁটার উপযোগী হয়েছে।

তবে ২৬ এপ্রিল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শস্যচিত্রের ধান কাটা হয় বলে জানান ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান। ধান কাটার পর এই ধান বগুড়ার কাহালু ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার প্রসেসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ধানগুলো প্রসেসিং করা হবে।

এর আগে ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি থেকে ও উচ্চ ফলনশীল দুই ধরনের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী বালেন্দা গ্রামে ৪০ একর জমি লিজ নেয়। পরে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সদস্যদের নিয়ে লে-আউট তৈরি করে।

১০০ জন রেজিমেন্ট বিএনসিসি সদস্যের দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে চারা রোপণ করেন। একদল শুকনো জমিতে চীনের চু-চিং জং-ই সিড কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত গাঢ় বেগুনী ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার কোম্পানি জনক রাজ (সবুজ) ‘দুই জাতের (হাইব্রিড) ধানের চারায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ফুটে তোলেন। তবে চারা লাগানোর আগে খুঁটি স্থাপনসহ লে-আউটের (নকশা) কাজে কৃষি প্রকৌশলীদের সঙ্গে অংশ নেয় বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সরকারি শাহ সুলতানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ১০০ শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যরা।

আড়াই ফিট দৈর্ঘ্যের প্রায় ১ হাজার ২শ’ খুঁটি পুঁতে প্রতিকৃতির লে-আউট করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক।

উদ্যোক্তারা জানান, পাখির চোখে (ড্রোন ব্যবহার করে) ম্যাপ করে স্কেচ তৈরির পর টানা দেড় মাস ধরে চলছিল বিশাল এই কর্মযজ্ঞ। নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আয়োজক শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ করেছিলেন। শষ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর বিশাল ক্যানভাসটি ৯ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন গিনেস বুক রেকর্ড প্রতিনিধি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি)প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।

গিনেস রেকর্ড প্রতিনিধিদের সন্তুষ্টি ও মতামত প্রকাশের ভিত্তি এবং ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’ তৈরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সব শর্তই পূরণ হওয়ায় গত ১৬ মার্চ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়। সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র (লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক) ক্যাটাগরিতে গিনেস রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে।

এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হয়েছে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং প্রস্থ ৩০০ মিটার, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র। ২০১৯ সালে চীনে তৈরি শস্যচিত্রটির আয়তন ছিল আট লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট।