করোনায় পিছিয়ে পড়া নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে: শিল্পমন্ত্রী

সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পিছিয়ে পড়া ও নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার আহবান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি।

বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ব্যাংক এশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে সারাদেশে লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উদ্যোক্তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, একই উদ্যোক্তা যেন বারবার প্রণোদনার সুবিধা না পায়, যেসব উদ্যোক্তা প্রথম প্যাকেজের আওতায় সুবিধা পাননি তাদের খুঁজে বের করে ঋণের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে নারী-উদ্যোক্তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সততার সাথে ব্যবসা অব্যাহত রেখে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তিনি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, সারা বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরূদ্ধার ত্বরান্বিত করা বিশেষ করে এসএমই খাতকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সরকার অনেকগুলি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। তার মধ্যে পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গ্রামীণ এলাকায় ঋণদান কার্যক্রম সম্প্রসারণের নিমিত্ত ১৫০০ কোটি টাকার নুতন প্যাকেজ ঘোষণা করে।

মূলত: ব্যাংক ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও গ্রামীন উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এধরনের বিভিন্ন সংস্থার ঋণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া এবং দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অব্যাহত রাখতে এ প্রণোদনা ঘোষণা করে। এসএমই ফাউন্ডেশন এ অর্থবছরে ছাড়কৃত অর্থ ৩০ জুনের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সভাপতির ড. মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সরকার নির্দেশিত সব ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। ইতোমধ্যেই ১১টি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। প্রণোদনার প্যাকেজের ঋণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য তিনি ব্যাংক এশিয়ার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এবং পিছিয়ে পড়া উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৫০টি এসএমই ক্লাস্টার, ৫০ এর অধিক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং নারী-উদ্যোক্তাদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময় সভা করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাগণ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে।

প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণকে ঋণ প্রদান করবে। মোট ঋণের ২৫-৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হাসান মোল্লা, অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার পক্ষ থেকে ২জন নারীসহ মোট ৮জন উদ্যোক্তার মাঝে ৬৩.৯০ লক্ষ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।