ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু তদন্তে মাদক এলএসডি পাওয়ার দাবি পুলিশের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) সেবন করেছিলেন এই তরুণ, আর তারপরই বিভ্রম ঘটায় নিজেই নিজেকে হত্যা করেন তিনি।

ঈদের পর দিন ১৫ মে জরুরি কাজের কথা বলে ঢাকার রওনা হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের ইমাম মুজিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর।
তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ শনাক্ত করে পরিবার।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ বলেছিলেন, ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কাটতে থাকেন হাফিজুর। আর বলছিলেন- ‘আমাকে মাফ করে দাও’।

তখন হাফিজুর মারা গেলেও তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি।

পরিচয় জানার পর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খুঁজতে নেমে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এরপর বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাওয়ার কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বুধবার ঢাকার লালমাটিয়া ও ধানমণ্ডি থেকে সাদমান সাকিব রুপল (২৫), আসহাব ওয়াদুদ তূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩) নামে হাফিজুরের তিন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২০০ ব্লট এলএসডি পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে হাফিজুরের বন্ধুদের দেওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, হাফিজুর ঈদের পরদিন ঢাকায় ফেরার পর সন্ধ্যায় এক প্রতিবন্ধী রিক্সাচালকের সঙ্গে বাজে আচরণ করেছিলেন। এরপর তারা কার্জন হল এলাকায় নেশা করতে বসেন।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “এলএসডি গ্রহণের পর বন্ধুদের একজন হাফিজুরকে বলেন, ‘মামা তুমি কাজটা ভালো করনি’। এরপর হাফিজুর কার্জন হলের মাঠ থেকে ছুটে বেরিয়ে যান। বন্ধুরা একবার থেকে ধরে এনেছিল। এরপর তিনি আবার বেরিয়ে যান। কয়েকজন রিকশাচালকের পা চেপে ধরে বলেন, ‘আমাকে মাফ করে দাও’।

“এরপরই তিনি ‘দা বাবা’র কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। আর হাফিজুরের অবস্থা দেখে ভয়ে কাউকে কিছু না বলে বন্ধুরা পালিয়ে যায়।”

এলএসডি এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করে। এটা জিভের নিচে যেমন রাখা হয়, আবার ইনজেকশানের মাধ্যমেও নেওয়া হতে পারে।

গোয়েন্দা পুলিশ যে এলএসডি ব্লট উদ্ধার করেছে, তা ছোট একটি ডাকটিকিটের মতো, যা জিহ্বার নিচে রেখে সেবনের মতো বলে জানান কর্মকর্তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র হাফিজুর রহমান ছিলেন একজন মুকাভিনয় শিল্পী। টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।