ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকার ঘোষণার দাবিতে যশোরে বিক্ষোভ

আইনী সুরক্ষা দিয়ে জাতীয় মজুরি কমিশন গঠন করে বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। ২৬ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানায় নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও সমাবেশে শ্রমআইন ও শ্রম বিধিমালার শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী ধারা ও বিধিসমূহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় পাইপপট্টি মোড় থেকে একটি বিক্ষাভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস।

বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা সরকার, অন্যতম নেতা নাজমুল হোসাইন ও জাতীয় ছাত্রদল নেতা মধুমঙ্গল বিশ্বাস প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বসংস্থা নির্দেশিত এসডিজি’র কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে দেশের জনগণকে ঋণগ্রস্থ করে তথাকথিত উন্নয়নের সাফাই গেয়ে চলেছে।

অথচ বাস্তবতা হচ্ছে মাথাপ্রতি ৮৫ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে (যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ২৫ হাজার টাকা) আজ প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণ করছে। ক্ষুধার জ্বালায় এবং এনজিও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় প্রায়শঃই আত্মহত্যার সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির পাশাপাশি গ্যাস, পানির মূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচসহ জীবনযাত্রার সকল কিছুর ব্যয় অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলেও বাড়ছে না শুধু শ্রমিকের মজুরি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ও মালিক গোষ্ঠীর অব্যাহত নির্মম শাসন-শোষণের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে অভাব-অনটন ও দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু করোনার অজুহাতেই দেশে নতুন করে আরও আড়াই কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় গার্মেন্টস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নৌ-যানসহ বিভিন্ন সেক্টরের নি¤œতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা জরুরী।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এ যাবতকালে ক্ষমতাসীন সকল সরকারই শ্রেণীগতভাবে মালিকগোষ্টির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার কারণে বিগত ৫০ বছরেও দেশে জাতীয় মজুরি কমিশন গঠন করা হয়নি। পাশাপাশি শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, দরকষাকষির সুযোগ ক্রমশঃ হরণ করা

এবং সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার উপযোগী করে শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঁশখালিতে পুলিশের গুলিতে ও রূপগঞ্জে অগ্নিদগ্ধসহ কারখানা ও অঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

একই সাথে বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টও আলোর মুখ দেখেনি। এ রকম দুঃসহ পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশী নির্মম শোষণ ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা,

শ্রমআইন ও শ্রম বিধিমালার শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী ধারা ও বিধিসমূহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান।