দূর আকাশ থেকে যেন গম্ভীর হুংকার দিয়ে হুমকি দিচ্ছে, ‘আসছি!’ অথচ এখনও বৃষ্টি আসেনি।
এই সম্ভাব্য বর্ষণকে উপেক্ষা করেই বেরিয়েছি পাখির ছবি তুলতে। পথজুড়ে চা বাগানের সবুজের ঢেউ আর মৃদু বাতাসের ছোঁয়ায় মন জুড়িয়ে যায়। আকাশে আলো ম্লান, তবে প্রকৃতির কোমলতা ঠিকই চোখে পড়ে। এমন সময়, গন্তব্যে পৌঁছেই পাখির ডাক। মুগ্ধ করা এক মেঘময় সকাল শুরু।
ক্যামেরা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছি কিছুক্ষণ। প্রায় দশ মিনিট যেতেই হঠাৎ শুরু হলো আষাঢ়ধারা। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঝে অপূর্ব সেই সবুজ প্রকৃতি যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ঠিক তখনই চোখে পড়ল মাথাকাটা এক ছায়াবৃক্ষের ডালে এক জোড়া নীলকান্ত পাখি, ভিজছে নিঃশব্দে।
Coracias benghalensis, বাংলা নাম ‘নীলকান্ত’ বা ‘বাংলা-নীলকান্ত’। শরীরজুড়ে গাঢ় ও হালকা নীলের অপূর্ব ছটা, মুখ, গলা ও বুকজুড়ে লালচে-বাদামি রঙ। লেজ, পেট, মাথা ও ডানা, সবখানেই নীলের শোভা। দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ সেন্টিমিটার, ডানার বিস্তার ১৯ সেন্টিমিটার, ওজন গড়ে ১৬৫ গ্রাম।
বৃষ্টিতে ভেজে চলেছে ওরা। আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা নেই। যেন ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টির ধারাকে বরণ করছে। প্রকৃতির নিয়মে অনেক পাখিই এভাবে নিজের পালক ভিজিয়ে নেয়, স্নানের মতো।
চা বাগান, পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাখি পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখা গেছে, পাখিরা সামান্য বৃষ্টিতে স্বেচ্ছায় ভিজে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি এলে তারা ডালপালার ঘন পাতার নিচে আশ্রয় নেয়, পালক গুটিয়ে রাখে, চোখ-মুখ বন্ধ করে স্থির হয়ে থাকে। তবে নীলকান্তদের বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্ত যেন ভিন্নতর এক ভালোবাসার গল্প বলে। ডানার মেলে ধরা নীল শোভা, সেই মুগ্ধ করা বৃষ্টির দিন, সব মিলিয়ে এক অসাধারণ দৃশ্য, প্রকৃতি আর প্রাণের এক নীরব সংলাপ।