আইএমএফের কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছে শ্রীলঙ্কা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই আর্থিক সংস্থা সেই আবেদন বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ তথ্য।

সোমবার ওয়াশিংটনে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী আলি সাবরির নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে আইএমএফ কর্মকর্তাদের।

সে বৈঠকে কর্মকর্তারা বলেছেন, আইএমএফের বিশেষ প্যাকেজ র‌্যাপিড ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্টের আওতায় শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করবে আইএমএফ।

কোনো দেশ জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনবোধ করলে মুদ্রা তহবিলের আরএফআইয়ের জন্য আবেদন করতে পারে। কোনো দেশ বা সংস্থায় জরুরিভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা পাঠানোর জন্যই এই প্যাকেজ চালু করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।

এর আগে শ্রীলঙ্কা সরকার আরএফআই প্রকল্পের আওতায় জরুরি আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিল, কিন্তু আইএমএফ প্রথমে সেই আবেদন মঞ্জুরে আগ্রহী ছিল না।

‘কিন্তু ওয়াশিংটনের বৈঠকে আইএমএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কাকে আরএফআই প্রদানের জন্য ভারত অনুরোধ জানিয়েছে এবং এই অনুরোধের পরই তারা আবেদন বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,’ মঙ্গলবার এক টুইটে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর সহকারী শামির জাভাহির।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, রিজার্ভ বাঁচাতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে পরিমাণ রিজার্ভ এখনও আছে, তা কেবল অতি জরুরি পণ্য আমাদানিবাবদ ব্যয় করা হবে।

বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত মাসে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান পড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

এদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।

জনগণের ক্ষোভের মুখে ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। চলতি এপ্রিল মাসে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আলি সাবরি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে সাবরি বলেছেন, চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরিভিত্তিতে ৩০০ কোটি ডলার প্রয়োজন শ্রীলঙ্কার। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও ভারত থেকে থেকে এই ঋণসহায়তা আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স