মেডিকেলে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারছে না যশোরের লিমন

অদম্য এক মেধাবীর নাম লিমন রহমান অত্যন্ত দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের সন্তান। ২০২১- ২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্স এর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নের সুযোগ মিলেছে। তবে অতি দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্মই যেন এক বিরাট বাঁধা।

আদেও কি পারবে; এই বাঁধা অতিক্রম করতে তা নিয়ে অজানা সংশয়ে পঙ্গু অসহায় পিতা ও পরের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে সংসার চালানাকারী “মা”।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ লিমন রহমান যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের বাসিন্দা। পঙ্গু চাতাল শ্রমিক সালাম রহমান ও গৃহপরিচারিকা ফাতেমার সন্তান। অধ্যবসায়ের পাশাপাশি লিমন রহমান অসহায় মা-বাবার সাথে কাজ করে উপার্যণ’ই ছিলো অন্যতম কাজ।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি’কে পুঁজি করে, দারিদ্রতা কে পিছনে ফেলে মেধাবী ছাত্র লিমন রহমান স্থানীয় আমদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর পঞ্চম শ্রেণি থেকে বৃত্তি লাভ করেন। এরপর আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে ও এসএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন প্লাস পেয়ে উত্তির্ণ কৃতিত্ব লাভ করেন এবং যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে জিপিএ গোল্ডেন পেয়ে এইচএসসিতেও অসাধারণ সাফল্য ধরে রাখেন।

লিমন রহমানের পিতা সালাম রহমান বলেন, আমার ছেলে ডাক্তারি পড়তি পারবে জীবনে কখনো ভাবদিও পারিনি। আমাগের বংশেরও কেউ কোনো দিন এত লেখাপড়া করতি পারিনি।

আপনারা দোয়া করবেন আমার ছেলে যেন ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাই, মস্ত বড় ডাক্তার হয়ে যেন গরিব গের চিকিৎসা করতি পারে। আমরা তো বিরাট গরিব মানুষ কি করে পড়ালেখা করাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সবাই মিলে যদি সাহায্য করে তাহলি হয়তো এই গরিবের স্বপ্ন ডা পূরণ হবে!

ভর্তির বিষয় নিয়ে অদম্য লিমন রহমান জানান, আমি অত্যান্ত দরিদ্র ঘরের সন্তান। আমার পরিবারের সামর্থ্য নেই ভালো ভাবে দু’বেলা খাবার তুলে দেয়ার। সেখানে ডাক্তার হওয়া স্বপ্ন কি করে পূরণ হবে জানিনা।

তবুও চেষ্টা করব স্বপ্নটাকে বাস্তবে পরিণত করতে। যাতে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আল্লাহ আছেন, নিশ্চয় তিনি আমার সহায় হবেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশীরা জানান, এই গ্রামের বিত্তশালী লোক রয়েছে; কিন্তু কোন পরিবারে এমন মেধাবী ছেলে নেই। লিমন আমাদের গর্ব, দরিদ্র ঘরের সন্তান সে নিজ প্রচেষ্টায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাবে কেউ ভাবতে পারিনি।

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ হলেও ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় এখন লিমন রহমান ও তার পরিবার। সমাজের সচেতন মানুষরা এগিয়ে এলে হয়ত প্রত্যন্ত গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হয়ে উঠবে আগামী দিনের দেশসেরা মানবিক ডাক্তার।