শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন রনিল বিক্রমাসিংহে

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি লঙ্কান রাজনৈতিক দল ইউএনপির নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ১২ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শপথ নেবেন তিনি।

দুপুরের দিকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত করা হয় আরেকবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হবেন বিক্রমাসিংহে।

ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শপথ নেওয়ার পর বিক্রমাসিংহে কলম্বোর একটি মন্দির পরিদর্শন করবেন এবং এরপর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

দেশব্যাপী টানা বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজ পাকসে। এরপরও দুদিন ধরে জ্বলে বিক্ষোভের আগুন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমপি-মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সহিংসতায় মারা যান এক এমপিসহ অন্তত ৮ জন।

শ্রীলংকার রাজপথে বিক্ষোভকারীদৈর তোপের মুখে পড়েন সরকারি দলের নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অনেকের গায়ের কাপড় খুলে মারধর করতে দেখা যায়।

এ অবস্থায় দেশব্যাপী কড়া কারফিউ জারি করে সরকার। সরকারি সম্পদ ধ্বংস করতে দেখলে সাথে সাথেই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে।

এ পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে সহিংসতা কিছুটা কমলেও বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত আছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি হলো প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াসহ রাজাপাকসে পরিবারের সবাইকেই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করছেন না। তিনি রনিল বিক্রমাসিংহেকে নিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন।

এদিকে, বুধবার রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সদ্য পদত্যাগ করা মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেই খবর কলোম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন থেকে নাকচ করা হয়।

রাজাপাকসের সন্ধানে বিক্ষোভকারীরা ত্রিঙ্কোমালির একটি নৌঘাঁটিতে জড়ো হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পর মাহিন্দা রাজাপাকসে বর্তমানে উত্তর-পূর্বের একটি নৌঘাঁটিতে অবস্থান করছেন।

বড় বড় প্রকল্পের নামে ভুল বিনিয়োগ, বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থা থেকে অপরিণামদর্শী ঋণগ্রহণ এবং কোভিড সময়ের ভুল নীতির কারণে শ্রীলংকা সম্প্রতি চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। ডলারের যোগান না থাকায় বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তারা বিদেশি ঋণ শোধ করতে পারবে না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়।

অর্থাৎ নিজেদের একপ্রকার দেউলিয়া ঘোষণা করে! দেশটিতে তৈরি হয় চরম মানবিক সংকট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাবারের দাম আকাশচুম্বি হয়ে যায়।

প্রতিবাদে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ মানুষ। তারা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এ বিক্ষোভে যোগ দেয় শ্রীলংকার ক্রিকেট ও বিনোদন জগতের তারকারাসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা রাজাপাকসে পরিবারকে দেশের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী করে এবং এজন্য প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীসহ ওই পরিবারের সবার পদত্যাগ দাবি করে।

উল্লেখ্য, শ্রীলংকায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও তাদের মন্ত্রীসভার অর্ধেকের বেশি সদস্যই ছিল রাজাপাকসে পরিবারের। ফলে সেখানে একরকম পরিবারতন্ত্র চলছিল।