গাড়ির জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে সয়াবিন তেল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, শুধু মানুষ না এখন গাড়িও সয়াবিন তেল খাচ্ছে। বিশ্বে বায়োফুয়েলের চাহিদা তৈরি হওয়ায় ব্রাজিল এখন গাড়ির জ্বালানি হিসেবেও সয়াবিন তেল ব্যবহার করছে। এজন্য তারা সয়াবিন রফতানি কমিয়ে দিয়েছে।

আবার করোনার পর সব পোর্ট যখন খুলে যায় তখন তারা রেন্টও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের সব-কটি বড় কন্টেইনার কোম্পানি তাদের কন্টেইনারের ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এই যে আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন বন্ধ, যুদ্ধ এই সবই প্রভাব ফেলছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য আসলেই বেড়ে গেছে অনেকগুলো পণ্যের। আমাদের অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে। এজন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি ও ডাল দিয়েছে রোজার সময়।

আগামী জুনের মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিসিবি পণ্যের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। শনিবার ২১ মে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, এতোদিন বাজার থেকে কিনে ভর্তুকি মূল্যে সরকার জনগণের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতো। এখন সরকার সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করে টিসিবির মাধ্যমে ওই পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আমাদের ভর্তুকির পরিমাণ কমে যাবে। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে দাম বাড়ার প্রসঙ্গে সিনিয়র এই বাণিজ্য সচিব বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন কে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য ভান্ডার উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।

দাম একটু দাম বাড়লে তাই এক্ষেত্রে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের যেটি ইমপোর্ট করে খেতে হবে সেটি একটু বেশি দামেই খেতে হবে। সরকার সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, মার্চে তেলের মূল্য নির্ধারণ করার পর ব্যবসায়ীরা আপত্তি তুলেছিলেন। আমরা রোজার জন্য বলেছিলাম ঈদের পরে বিষয়টি ঠিক করে দেবো। তারা সেই সুযোগ নিতে ঈদের আগে পরে তেল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেছিলো।

সোমবার (২৩ মে) থেকে পামঅয়েলের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে পামতেলের বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে সয়াবিনের বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছেনা।

দেশে সম্প্রতি তেল মজুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী খারাপ কিন্তু সব ব্যবসায়ী খারাপ না। এবার যেভাবে বোতল কেটে তেল বিক্রি করা দেখলাম এটিতো মিল মালিক বা বড় ব্যবসায়ীরা করেনি।

আশির দশকে দেশের মানুষ রান্নাবান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করতো উল্লেখ করে সিনিয়র বাণিজ্য সচিব বলেন, এখন সবাই সয়াবিন তেল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সরকার বিকল্প ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতে চিন্তাভাবনা করছে। এজন্য সরিষা, বাদাম, তেল, তিশি, রাইস ব্রান্ডের তেলের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

তিনি রাইস ব্রান্ড তেলের সম্ভাবনা তুলে ধরে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে দেশে বর্তমানে মাত্র ৩০ হাজার মেট্রিক টন রাইস ব্রান্ডের তেল উৎপাদন করা হয়।

এই পরিমাণ বাড়িয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন করা যাবে বলে গবেষকরা মনে করেন। আবার উৎপাদনের ক্ষেত্রে দক্ষতা একটি ব্যাপার। অনেক পণ্য আছে আমরা উৎপাদন করি কিন্তু বাইরের দেশ তার চেয়ে কম দামে দিতে চায়।

এমন একটি পন্য গরুর মাংস আমদানি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সহ কিছু দেশ আমাদেরকে কম দামে এই গরুর মাংস দিতে চায়। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে ৩শ’ থেকে চারশো টাকায় পাওয়া যাবে।

এক্ষেত্রে ভোক্তারা উপকৃত হবেন। কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশের ক্ষুদ্র চাষিরা এই গরু পালন করে স্বাবলম্বি হন তাই তাদের কথা বিবেচনা করে সরকার গরুর মাংস আমদানি করেনা। সূত্র: জাগো নিউজ।