নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে রাজধানীর ৭৯ বৈধ কারখানায়

 

নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে রাজধানীর ৭৯ বৈধ কারখানায়

 

দেশে নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েকটি বৈধ কারখানায়। রাজধানীর মিটফোর্ডকেন্দ্রিক একটি মুনাফালোভী চক্র ওষুধ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদিত ৭৯টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কারখানায় বিভিন্ন নামিদামি অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানির ওষুধ নকল করা হয়।

 

গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সরবরাহ করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে।

 

 

ডিবি জানিয়েছে, দেশীয় ওষুধের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে নকল করা হচ্ছে বিদেশি নামিদামি ওষুধও। এগুলো উৎপাদন ও বিপণনের কাজে জড়িত একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। আর নকল ওষুধ বিপণনের বড় হাট রাজধানীর মিটফোর্র্ড। এখান থেকেই অসাধু চক্র কুরিয়ারের মাধ্যমে নকল ওষুধের চালান পাঠিয়ে দেয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফার্মেসি মালিকদের কাছে। অধিক লাভের আশায় জেনেশুনেই ফার্মেসি মালিকরা তা কিনে নিচ্ছে।

 

এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নকল, ভেজাল ও নিুমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা।

 

ডিবি জানিয়েছে, হুবহু ‘আসল’ মোড়কে গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে সংঘবদ্ধ চক্র, যা দেখে ভোক্তাদের আসল-নকল পরখ করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। তথ্য রয়েছে, এ চক্রকে সহযোগিতা করছে অতি মুনাফালোভী কতিপয় ফার্মেসি মালিক।

 

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বৈধ বিভিন্ন ইউনানি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ। আটা, ময়দা, রং ও ঘনচিনি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব নকল ওষুধ। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অলিগলিসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোয়, যা রোগ সারানোর বদলে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

 

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীর ফকিরাপুলকেন্দ্রিক প্যাকেজিং ব্যবসা গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন নামিদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো এসব কারখানা থেকে বিভিন্ন ওষুধের মোড়ক তৈরি করে। কিছু প্যাকেজিং কারখানার অসাধুরা অর্ডারের অধিক পরিমাণে মোড়ক তৈরি করে, যা পরে নকলকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়।

 

ফলে এসব মোড়কে নকল ওষুধ বাজারজাত হলেও বোঝার কোনো উপায় থাকে না কোনটা আসল আর কোনটা নকল। তিনি বলেন, রোগ সারানোর বদলে নকল ওষুধ মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নকল ও ভেজাল ওষুধচক্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযান করা গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ যুগান্তরকে বলেন, যতগুলো প্রতিষ্ঠানে আমরা নকল ওষুধ তৈরির অভিযোগ পেয়েছি, সবই অনুমোদিত। এসব আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি কোম্পানি বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ বানাচ্ছে। বাইরে নতুন করে নকল ওষুধ ফ্যাক্টরি কেউ স্থাপন করেনি। ইউনানি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করতে না পারলে নকল ওষুধ তৈরি বন্ধ করা মুশকিল। ওষুধ প্রশাসন বারবার বলছে, তাদের জনবল কম, যে কারণে অ্যাকশনে যেতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

 

এছাড়া খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুল কবির যুগান্তরকে বলেন, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ ওষুধসেবন করে জীবনরক্ষার জন্য; কিন্তু এতে যদি জীবনের জন্য ক্ষতিকর হয়, তা দুঃখজনক।

 

তিনি বলেন, নকল ওষুধে আটা, ময়দা যদি মেশায় তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ক্ষতিকর হবে না। কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক এবং কাপড়ের রংসহ অন্য যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশাচ্ছে, তাতে মানুষ আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন

বলেন, নকল ভেজাল ওষুধ যারা তৈরি করে, তারা অতি গোপনে এসব কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে হলে আমাদেরকে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে হয়। তাই এখন আমরা নিজস্ব ইন্টিলিজেন্স করা যায় কি না তা ভাবছি।