বাজারে সার নিয়ে নৈরাজ্য

 

বছরের শুরুতে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন কৃষক। তখন ডিজেলে ভর্তুকির দাবি জানানো হলেও কৃষিমন্ত্রী সারে ভর্তুকি বাড়ানোর আশ্বাস দেন। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরের তুলনায় ভর্তুকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে চলতি বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সারের দাম বাড়ানো হবে না। প্রয়োজনে ভর্তুকি আরও বাড়ানো হবে। কিন্তু হঠাৎ গত ১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানো হয়। দাম বৃদ্ধির খবরে বাজারে শুরু হয়েছে নৈরাজ্য। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। আবার কোথাও কোথাও বেশি দামে সার মিলছে না।

 

সরকার শুধু ইউরিয়ার দাম বাড়ালেও অন্যান্য সারের দামও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় প্রান্তিক কৃষকরা রয়েছেন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, দাম বৃদ্ধির প্রভাব উৎপাদনে পড়বে না। আজ বৃহস্পতিবার সারের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে ফসলের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। এতে খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হতে পারে।

কৃত্রিম সংকট :বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর এলাকার কৃষক আনসার আলী বলেন, তিনি মঙ্গলবার স্থানীয় বাজারে সার কিনতে গেলে প্রথমে বলা হয় সার নেই, পরে দাম বেশি দিলে সার দেওয়া হয়। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের দশমাইল এলাকায় সাথী এন্টারপ্রাইজের নামে একটি সারের ডিলার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শাহজাহান আলী এখন আর ব্যবসা করেন না। কয়েক বছর ধরে তাঁর লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। তাঁর ভাগ্নে মোতালেব হোসেন মাস্টার সেটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে লাইসেন্সের দেওয়া শর্ত ভেঙে নির্দিষ্ট স্থানের (গাড়ীদহ বাজার) পরিবর্তে জামুন্না বাজারে বিক্রয়কেন্দ্র খুলে বসেছেন ওই ব্যবসায়ী। এরপর থেকে নিয়মিত ওই লাইসেন্সে সরকারি বরাদ্দের ইউরিয়া সার উত্তোলন করছেন। জুন-জুলাইয়ে বরাদ্দের অবিক্রীত ইউরিয়া সার প্রতি বস্তায় ৩০০ টাকা বেশি বিক্রি করছেন তিনি। পুরো উপজেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাড়তি দামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।

সরকার শুধু ইউরিয়ার দাম বাড়ালেও অন্যান্য সারের দামও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন কৃষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়ার শহরতলির নগর মোহাম্মদপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম আমন আবাদ করছেন ১৮ কাঠা জমিতে। তিনি বলেন, ১৫ টাকার পটাশ কিনেছি ১৭ টাকায়, এক সপ্তাহ আগে কেনা ১৬ টাকার ইউরিয়া ২০ টাকা ও ১৬ টাকার ফসফেট বা ডিএপি কিনতে হয়েছে ২২ টাকায়। যে সার কিনতে আগে ১ হাজার টাকা লাগত, এখন লাগছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

 

শরিফুলের কথার সত্যতা মিলেছে বেলঘরিয়া গ্রামের সার ব্যবসায়ী সাঈদ আহমেদের কথায়। সাঈদ জানান, তিনি সদর উপজেলার ১১ মাইল এলাকার একটি দোকান থেকে সার কিনেছেন। সব ধরনের সারের দাম ডিলার কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি রেখেছেন। কুমারখালীর নন্দলালপুরের রোজদার আলী নামে এক কৃষক বলেন, ১০ কেজি সার চাইলে পাওয়া যাচ্ছে ৫ কেজি। তাও ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। বাজারে পটাশ সারের ভয়াবহ সংকট বলেও জানান তিনি।

সবজি চাষি সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকার বাড়াল ইউরিয়া সারের দাম। আর ব্যবসায়ী ও ডিলাররা বাড়িয়েছেন সব সারের দাম।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, সার নিয়ে কেউ যাতে ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকে তাঁরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন।

 

কৃষিমন্ত্রী বলছেন উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না :ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমলে দেশেও সারের দাম কমানো হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার বরিশালে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সে জন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে প্রথমে ২৫ টাকা (২০০৯ সালে) এবং পরে ২০১৯ সালে আরও কমিয়ে ১৬ টাকা করে। এ উদ্যোগের ফলে কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমেনি। দাম বৃদ্ধির ফলে ইউরিয়ার ব্যবহার কমবে বলেও আশা করেন মন্ত্রী।