ট্রানজিট চুক্তি: মোংলা বন্দর ব্যবহার শুরু করল ভারত

 

ট্রানজিট চুক্তির আওতায় মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস শুরু করেছে ভারত। বাংলাদেশি মালিকানাধীন এমভি রিশাদ রায়হান লাইটারে থাকা দুইটি কন্টেইনার থেকে মেশিনারিজ পণ্য খালাসের মাধ্যমে মোংলা বন্দর ব্যবহার শুরু করেছে ভারত। সোমবার দুপুরে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষামূূলক ট্রানজিট চুক্তির কার্যক্রম শুরু হয়।

 

এ সময় মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার প্রণয় কুমার বর্মা ছাড়াও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজটি ছেড়ে আসে। রবিবার সকালে মোংলা বন্দরের ত্রিমোহনা নালায় এসে নোঙর করে।

সোমবার দুপুরে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের কাজ শুরু হয়। সেখানে খালাস হওয়া কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য নৌযান থেকে সরাসরি টার্মিনাল ট্রাক্টরে উঠানো হয়। পণ্য নিয়ে ট্রাক্টরটি সড়কপথে ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।

 

কলকাতা থেকে নৌযানে আসা দুটি কন্টেইনারের একটি সিলেটের তামাবিল সীমান্ত হয়ে ভারতের মেঘালয়ে যাবে। আরেকটি কন্টেইনার কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে যাবে।

 

অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি) চুক্তির আওতায় এই ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন) শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি হয়। এরপর প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রান হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেওয়া হয়েছিল। তখনকার পণ্য ছিল ডাল ও রড। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পরে ভারতের পক্ষ থেকে চারটি রুটে ট্রায়াল রানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তবে আপাতত দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ। তার প্রেক্ষিতেই মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে কলকাতা বন্দর।

 

এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ট্রায়ালে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশি নৌযান (কার্গো) ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ আসে মোংলা বন্দরে। নৌযানটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জ্যাক শিপিং। আর সিঅ্যান্ডএফের কাজ করছে সুইফট লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড। মার্কস লাইনের এই দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটিতে রয়েছে ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপ এবং আরেকটিতে রয়েছে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ মেট্টিক টন প্রিফোম।

 

মোংলা বন্দর জেটিতে পণ্য খালাসের সময় ভারতের সহকারী হাইকমিশনার ইন্দ্রজিৎ সাগর বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহন শুরু হয়েছে।’

 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।