ইতিহাসের পাতায় ১০ মুহররম

“কাঁদে কোন্ ক্রদসী কারবালা ফোরাতে,

সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে!”

হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, মহররম মাসে এমন একটি দিন আছে যেদিন আল্লাহ তাআলা এক সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করেছিলেন এবং আগামীতেও তিনি আরেক সম্প্রদায়ের তাওবা এই দিনে কবুল করবেন। সেই দিনটি হলো মহররমের দশ তারিখ। আর এ দশ তারিখ ইসলাম ধর্মে খুবি গুরুত্বপূর্ণ দিন। পৃথিবীর ধারাবাহিক ইতিহাসে এ তারিখটি অনেক তাৎপর্য বহন করে। মুসলিম উম্মাহ ইসলামের ইতিহাসের ঘটনাবহুল এ দিবসটি যথাযথ সম্মানের সাথে কিছু আমলের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকে।
এই দিনে ইতিহাসের পাতায় অনেক ঘটনা পাওয়া যায়। তার মধ্যে রয়েছে –

(০১) এই দিনে আল্লাহ তাআলা সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।
(০২) এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
(০৩) কথিত আছে এই দিনে দীর্ঘ তিনশত বছর অবিরাম কান্নার পর হযরত আদম (আ.) এর দোয়া মহান সৃষ্টিকর্তা কবুল করে নেন।
(০৪) এই দিনে পৃথিবীর বুকে হযরত হাওয়া (আ.) কে পাঠানো হয়।
(০৫) এই দিনে আরাফার ময়দানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) মিলিত হন।
(০৬) এই দিনে হযরত নূহ (আ.) এর কিসতী জমিনে অবতরণ করে।
(০৭) এই দিনে হযরত ইবরাহীম (আ.) দীর্ঘ চল্লিশ দিন নমরুদের অগ্নি কুন্ডলিতে থেকে মুক্তি পান।
(০৮) এই দিনে হযরত আইয়ুব (আ.) রোগ থেকে সুস্থ হন।
(০৯) এই দিনে হযরত ইয়াকুব (আ.) নিজের হারানো চক্ষু ফিরে পান।
(১০) এই দিনে হযরত ইউসুফ (আ.) কে তার বাবা দীর্ঘ ৪০ বছর পর ফিরে পান।
(১১) এই দিনে হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।
(১২) এই দিনে হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে নদী পার হয়ে মুক্তি পান। আর ফেরাউন এ দিনে নদীতে নিমজ্জিত হয়ে মারা যায়।
(১৩) এই দিনে হযরত ঈসা (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়।
(১৪) এই দিনে হিজরী ৬১ সনে রাসূল (সা.) এর দৌহিত্র সাইয়েদুনা হযরত হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে শহিদ হন।

কারবালার ঘটনা ইসালামের ইতিহাসে কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যার ক্ষত মুসলিম বিশ্ব এখনো শুকাতে পারেনি। সত্যের পক্ষে আর অন্যায়ের বিপক্ষে ছিল সে দিনের ঘটনা। এটি আমাদের শিক্ষা দেয়, জীবন দিবো তবু সত্যের পক্ষে থাকবো। চাই আমাদরে মৃত্যু আসুক। হযরত হোসাইন (রা.) এ শিক্ষাই মুসলিম জাতিকে দিয়ে গেছেন। আমাদের এ ঘটনার ধারাবাহিকতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনা করার কর্ম পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারি।
“ফিরে এল আজ সেই মোহর্‌রম মাহিনা,–
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না!”

এই দিনে করনীয় :
সকল ঘটনায় স্পষ্ট হয় যে, এদিনটি ইসলামের বিজয়ের দিন। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের দিন। অনেক সম্প্রদায়ের মুক্তির দিন। সকল কল্যাণময় ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়েছিল। এ দিনেই সত্যের জয় আর মিথ্যার পরাজয় দুনিয়ার সকল মানুষের সামনে স্পষ্ট উজ্জ্বল হয়েছিল। এটি ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি অনুগ্রহ ও বিশাল দান। তাই বান্দার পক্ষ থেকে তার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত। যুগে যুগে এ দিনে বান্দারা কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মহান আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার লক্ষ্যে সিয়াম পালন করে আসছে। এ সিয়ামের ধারাবাহিকতা মহা নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)ও পালন করেছেন।

ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজত করে মদীনায় আসলেন। তিনি আশুরার দিন ইয়াহুদি সম্প্রদায়ের লোকদের রোযা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেন আজকের এ দিনটিতে রোযা রেখে থাক? তারা বললো, আজকের এই মহান দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরউন ও তার সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাই মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এ দিন রোযা রেখেছিলেন। এ জন্য আমরাও এদিন রোযা রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরাই তোমাদের চেয়ে মুসার (আ.) অধিক আপনজন ও হকদার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দিন রোযা রাখলেন এবং আমাদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।
[বুখারী হাদীস নং ১৮৭৮,
মুসলিম হাদীস নং ২৫২৪]

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোযা রাখত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ রোযা রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তী রমযানে রোযা ফরজ হলে রাসূল (সা.) বলেন, যারা ইচ্ছা আশুরার রোযা রাখবে এবং যারা ইচ্ছা রাখবে না।
(বুখারী ১৭৭২ মুসলিম ২৫০৩)