ধানের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে চালের দাম বাড়িয়ে দেন মিল মালিকরা, অথচ ধানের দাম অব্যাহতভাবে কমলেও চালের বাজারে থাকে না তার প্রভাব। চিরায়ত সেই নিয়মের দেখা মিলছে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই মোকামে কয়েকদিন ধরেই নিয়মিত ধানের দাম কমছে। তবে আগের দামেই চাল বিক্রি করছেন মিল মালিকরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, শেষ কয়েক দিনে প্রতি মণ ধানে ১০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মিল মালিকরা বলছেন, প্রতি মণ ধানে মোকামগুলোতে কমেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে মিলগেটের পাশাপাশি খুচরা বাজারেও আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে।
বিএডিসির বীজ ব্যবসায়ী, কৃষক, মিল মালিক ও আড়তদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাইরে থেকে চাল আনতে এলসিতে শুল্ক্ক কমানোর তথ্য, মোকামে চাল বিক্রি কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু কারণে কয়েকদিন ধরে ধানের দাম কম বলছেন মিল মালিকরা। তবে এসব তথ্যে সেখানে চালের দাম কমার কথা হয়নি।
কুষ্টিয়া বিএডিসির বীজ ব্যবসায়ী জুবায়েদ রিপন জানান, তাঁর কাছে প্রায় ১৩ টন ধান ছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ ধানের জন্য প্রায় দেড় হাজার টাকা দাম বলেছিলেন মিল মালিকরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বীজ ব্যবসায়ী জানান, এখন প্রতি মণ ধানের দাম বলা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। তারপরও ধান কেনার ব্যাপারী পাচ্ছেন না। মিল মালিকরা এর থেকে বেশি দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, সব ধরনের ধানের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমেছে।
ধানের দাম না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকরাও। সদর উপজেলার আব্দালপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে ধান বিক্রি করার জন্য তাঁরা বাজারে যান। গিয়ে দেখেন ধানের দাম পড়ে গেছে। ব্যাপারীও কম। প্রতি মণ ধানের দাম ওঠে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ কারণে তাঁরা ধান ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
তবে চালকল মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, এক সপ্তাহ ধরে ধানের দাম প্রতি মণে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমেছে। চালের বাজার এখনও স্থিতিশীল। তবে বেচাকেনা অনেকটা কম। সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।
মিল মালিকরা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে চালের দাম যখন বাড়ছিল তখন কেনাবেচাও বেশি হয়েছে। অনেকে দুই বস্তার জায়গায় তিন থেকে ৪ বস্তা চাল কিনে রেখেছেন। ব্যবসায়ীরাও অনেক চাল কিনেছেন। এখন চাল কেনাবেচা নেই, মিল মালিকরাও ধান কিনছেন কম। এ কারণে ধান ও চাল দুটির দামই কমতে পারে।
খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, এই মাসে ডিজেলের দাম বাড়ার পর ট্রাকের ভাড়া বাড়ার অজুহাত দিয়ে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা চালের দাম বাড়িয়ে দেন মিল মালিকরা। তবে পরিবহন খরচের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসাধু মিল মালিকরা। তাঁরা জানান, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মোকাম থেকে এক ট্রাক ধান খাজানগর মোকামে আসতে আগে ট্রাক ভাড়া লাগত ১৬ হাজার টাকা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর সেই খরচ এখন পড়ছে ২১ হাজার টাকার মতো। একটি ট্রাকে ধান আসে ১৭ থেকে ১৮ টন। সেই হিসাবে প্রতি কেজি ধানে পরিবহনে খরচ বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ পয়সা। অথচ বেশিরভাগ মিল মালিক প্রতি কেজি চালের দাম বাড়িয়ে দেন ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
ফ্রেস এগ্রো ফুডের এমডি ও চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক জানান, ধানের দাম কমছে এটা ঠিক, তবে চালের দামে তেমন হেরফের হয়নি। মিলগেটে চালের দাম এখনও কমেনি। তবে দু’একদিন পর এর প্রভাব পড়তে পারে। কোনো কোনো মিল মালিক চালের দাম কিছুটা কমিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ধান ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে মিল মালিকরা কয়েক দফায় দাম বাড়িয়ে দেন, সেটা যৌক্তিক ছিল না। ডিজেলের দাম বাড়ার পর তাদের পরিবহন খরচ বাড়লেও সব মিলিয়ে প্রতি কেজির হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা হতে পারে। তবে এ অজুহাতে তাঁরা কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দেন। আমরা এসব কারণে অভিযান পরিচালনা করে আসছি।
তিনি অবশ্য দাবি করেন, গত দুই দিন ধরে খুচরা বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়েছে। সরু, মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমেছে। মিলগেটেও দাম কমতে শুরু করেছে। সামনে দাম আরও কমবে।
খাদ্য বিভাগ ২ টাকা কমার কথা বললেও পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, চালের দাম এখনও কমেনি। আগের দরেই সরু চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চালও বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। নতুন করে কোনো অর্ডার দিচ্ছেন না তাঁরা। তবে সামনে দাম কমার সম্ভাবনা আছে।