মনোনয়ন দ্বন্দ্বে দলের পদ গেল এমপি পংকজের

 

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি পংকজ দেবনাথকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ারও নির্দেশ পেয়েছেন এই এমপি। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। অব্যাহতির কারণে তিনি এই পদ হারিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদকে কেন্দ্র করেই পংকজ দেবনাথকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন। তাঁদের মতে, দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েই দলের পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন পংকজ দেবনাথ। এই দুই নেতা আগামী সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

স্থানীয় রাজনীতিতে বরিশাল-৪ আসন সংঘাতপূর্ণ এলাকা। পংকজ দেবনাথ এমপির পক্ষ-বিপক্ষ গ্রুপ সবসময়ই মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। হামলা-পাল্টা হামলায় প্রতিপক্ষকে খুন কিংবা পঙ্গু করে দেওয়াটা এই নির্বাচনী এলাকার নিয়মিত ঘটনা। এই অবস্থায় অব্যাহতির খবর জানাজানির পর পংকজ দেবনাথবিরোধী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন।

জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশের ভিত্তিতেই পংকজ দেবনাথকে পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে পংকজ দেবনাথ সমকালকে বলেছেন, তিনি অব্যাহতির চিঠি পেয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিঠির জবাব দেবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস জানান, জেলা কমিটির উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন পংকজ দেবনাথ। তিনি এখন আর দলের কেউ নন।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলার রাজনীতির সঙ্গে খুব একটা সম্পৃক্ততা ছিল না স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নিজস্ব বলয় তৈরিতে উদ্যোগী হন। ফলে দলের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ে। তৈরি হয় বিরোধ। পংকজবিরোধী নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের পরিচয়ে ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। তাঁদের মোকাবিলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে ভেড়ানোর অভিযোগও ওঠে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে।

 

দু’পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। চেয়ারম্যান পদে বেশিরভাগ ইউনিয়নে মনোনয়ন পান পংকজবিরোধীরা। আর ওইসব ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হন পংকজের অনুসারীরা। প্রায় একই চিত্র ছিল গত ইউপি নির্বাচনেও। গৃহদাহের বিরূপ প্রভাব পড়ে মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলা নির্বাচনেও। দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। জয় পান পংকজ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী।

এ প্রসঙ্গে দলের হিজলা উপজেলার সহসভাপতি ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দুটি উপজেলা ও ১০টি ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে আনন্দ পান এমপি পংকজ দেবনাথ। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদের অভিযোগ আরও গুরুতর। তিনি বলেন, পংকজ দেবনাথের নির্দেশে আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। পঙ্গু হয়েছেন অনেকে।

 

কাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সঞ্জয় শীল জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করায় পংকজ দেবনাথের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করে।

এমনকি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখে।

 

উলানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল হোসেন মোল্লা বলেন, গত ৫ জুলাই পংকজ দেবনাথের সমর্থকরা দলীয় নেতা রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করে। ওইদিন পংকজ দেবনাথ মেহেন্দীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামানকে ফোনে বলেন, তাঁর লোকজন পৌর মেয়র কামালকেও কোপাবে। এই কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ছাড়াও পংকজ দেবনাথ তাঁর আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদকে নিয়েও অশালীন মন্তব্য করেন।