রংপুরে সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে রাস্তায় মানুষের ঢল

রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। আজ শনিবার সকাল হতেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল নামে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় রাস্তায় চলে গেছে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে সমাবেশস্থল।

মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে উঠেছে রংপুর নগরীর প্রধান সড়কগুলো। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও নীলফামারীর নেতাকর্মীরা সিও বাজার মেডিকেল মোড় ও বঙ্গবন্ধু চত্বর হয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন। গাইবান্ধা ও রংপুরের পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুরের লোকজন বাস টার্মিনাল ও মডার্ন মোড় দিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন। লালমনিরহাট জেলার লোকজন কাকিনা শেখ হাসিনা সেতু হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার লোকজন সাতমাথা হয়ে পায়রা চত্বর দিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ।

বাস বন্ধসহ নানারকম বাধার মুখে পড়েও বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে রংপুরে এসেছেন নেতাকর্মীরা। পরিত্যক্ত বাড়িতে, স্কুলের বারান্দা ও মাঠে, রাতের ফাঁকা ফুচকার দোকানে, সমাবেশস্থলের খোলা মাঠে কিংবা ফুটপাতে রাত্রিযাপন করেছেন আগেরদিনই রংপুরে চলে আসা নেতাকর্মীদের অনেকে।

ঠাকুরগাঁও থেকে আসা বিএনপির সমর্থক ফরহাদ হোসেন ও জাহিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ট্রেনে করে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে তারা চার থেকে পাঁচশজন রংপুরে এসেছেন। নগরীর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর খোলা জায়গায় তারা রাত্রিযাপন করে শনিবার সকালে গণসমাবেশে এসেছেন।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাগাইহাট ইউনিয়নের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার কেরাদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আহসান হাবীব কাজল বলেন, তারা হোটেলে জায়গা না পেয়ে শুক্রবার রাতে ফুচকার দোকানের ভেতর ও মাটিতে খড় বিছিয়ে শুয়ে নির্ঘুম রাত পার করেছেন। গোবিন্দঞ্জ থেকে অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার ও পায়ে হেঁটে এসে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন রুহুল আমিন ও তাঁর সঙ্গীরা।

ঢাকার পল্টন ও গুলিস্থান থেকে আগত যুবদল কর্মী বাবলু, কাওসার ও বেলাল জানান, ট্রেনে করে ঢাকা থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী শনিবার সকালে রংপুরে পৌঁছেছেন।

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক অভি, কাজিহাল ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজ, ফুলবাড়ী পৌর ছাত্রদলের কর্মী ফেরদৌস জানান, আমরা ৪ হাজার মোটরসাইকেল নিয়ে শুক্রবার রাতে সমাবেশস্থলে এসেছি। খোলা মাঠে কুয়াশার মাঝে রাত কাটিয়েছি।

লাঠির মাঝে ধানের শীয় ও পতাকা নিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছেন গাইবান্ধার ৭০ বছর বয়সি কৃষক নুর আলম। তিনি বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমি সমাবেশে এসেছি। আমাদের এলাকা থেকে দুই হাজার মানুষ ভ্যানে করে এসেছে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের ধনবর আলী (৭০) বলেন, ‘সরকার পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে আমরা রংপুরে এসেছি। হোটেলে জায়গা নেই, ফুটপাতে ঘুমিয়ে রাত পার করেছি।’

পঞ্চগড় দেবীগঞ্জ থেকে আসা জেলা কৃষক দলের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৫৬টি মোটরসাইকেলে নেতাকর্মীদের নিয়ে আজ শনিবার সকালে সমাবেশে এসেছি। কোনো বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না।’

শুক্রবার রাতেই পীরগঞ্জ দানিসনগরের রাঙ্গামাটির বিএনপির সমর্থক নুর আলম, নাসিম, মাজহারুল, রাশেদ দলীয় গেঞ্জি পরে সমাবেশস্থলে এসেছেন। নেতাকর্মীর মুখে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, তারেক জিয়ার প্রত্যাবর্তন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকানোর দাবিতে স্লোগান।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যেরা অবস্থান করছেন। বিএনপির সমাবেশের কারণে যেন নগরবাসীর জানমালের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে আমরা সজাগ রয়েছি।