বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এ উপমহাদেশে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। এ সংবিধান প্রণয়নে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ গঠন করা হয়েছিল। এতে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচিত প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

ফলে এটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় গঠন করা হয় অর্থাৎ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। এটি ১৯৭২ সালে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।

সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করেছি। এই বিজয়ের জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর করা উচিত। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকেই সংবিধান কার্যকর হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার মাধ্যমে এই সংবিধানকে হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। বস্তুত, এরপর এই দেশের স্বাধীনতাকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের কালো আইনটি (ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ) প্রথমে অধ্যাদেশ আকারে এলেও পরে জাতীয় সংসদেও পাস করা হয়।

 

এই অবস্থায় দেশ চলেছে ২১ বছর। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করেন। এরপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান বহুলাংশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয় অবশ্য এখনও ফিরিয়ে আনা যায়নি। সেটি আমরা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি (বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় রিভিউ আবেদন বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে)। আশা করি, আমরা সেখানেও ফিরে যেতে পারব। তবে আরও কিছু বিষয় আছে যেখানে হয়তো বাস্তবতার নিরিখে ফিরে যাওয়া হয়নি। যাই হোক, বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনও আছে।

এই সংবিধান কার্যকরের ৫০ বছর হয়েছে। সংবিধান প্রণয়নের দিবসকে আমাদের সম্মান করা উচিত। এই দিনটিকে সম্মান করলে জনগণের আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত সংবিধানের উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে জনগণকে, বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। এতে তারা অনুপ্রাণিত হবে।