যশোরে পুলিশ সেজে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারির নেতৃত্বে গরু চুরি!

যশোরের চৌগাছায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীমের নেতৃত্বে গরু চুরির অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় জড়িত অন্যান্যরাও নিজেদের দায় এড়াতে ইব্রাহীমের জড়িত থাকার বিষয়ে মুখ খুলেছেন। গত ৬ নভেম্বর (রবিবার দিবাগত) ভোররাতে বুন্দলিতলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটলেও এখনো চৌগাছা থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে মহেশপুর এবং চৌগাছার গরু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, আমাদের সিন্ডিকেটের প্রায় ৪ লাখ টাকা দামের দুটি উন্নত প্রজাতির ভারতীয় গরু চৌগাছা হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে গত শনিবার মহেশপুর সাতপুতা গ্রামের আকতারের মাধ্যমে উপজেলার বুন্দলিতলায় তার চাচাত বোনের ছেলে (মতিয়ারের ছেলে) সুমনের বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে গরুর বিষয়ে সুমনকে ফোন করলে সুমন বলে,“গরু দুটি বেচে খেয়ে ফেলেছি। পারলে টাকা আদায় করে নিস।

এদিকে পুলিশ পরিচয়ে মারধোর করে যার কাছ থেকে গরু দুটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে বুন্দলিতলার সেই ইলিয়াছ জানালেন, শনিবার সন্ধায় সুমন গরু দুটো নিয়ে এসে আমার বাড়িতে রাখে। গরুগুলো ইন্ডিয়ান হওয়ায় স্থানীয় এবং সুমনের চাচার পরামর্শে ওগুলো বাশ বাগানে বেধে রাখি। পরে সুমন রাত তিনটার দিকে এগুলো নিয়ে যাবে বলে জানায়। এরকিছুক্ষন পরে সুমন, ফারুক আর রিপন কসাই পরিচয়ে তিনজনকে নিয়ে আসে। তার কিছুক্ষনপরে লম্বা, বেড়ে,খাটো এরকম পাচজন এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাকে মারধোর করে। সেই পুলিশ পরিচয়দানকারিরা বলে, “কথা বললি গলায় গামছা পেচায়ে মেরে ফেলবো”। তখন আমি আর আমার বউ দৌড়ে পালায়। সেই রাতেই (৩ থেকে সাড়ে তিনটা) সুমন, ফারুক, রিপন আর ওই সেই পাচজন চৌগাছার দিক থেকে থেকে একটা নসিমন নিয়ে এসে তাতে করে গরু দুটো নিয়ে যায়।

বুন্দলিতলা বাজারের নাইট গার্ড আশরাফ আলী বলেন,“ভোর রাতের দিকে সুমনসহ কয়েকজন বাজারের এক দোকানে ছিল। আমি এগিয়ে গেলে একজন বলে ওখানে পুলিশ আছে তোমার যাওয়ার দরকার নেই। এরপরে তারা নসিমন নিয়ে এসে সেগুলো নিয়ে যায়।

এঘটনায় অভিযুক্ত, ওই ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি প্রার্থী ফারুক জানালেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে সুমন দুটি অবৈধ ভারতীয় গরু নিয়ে আসে। এরপর রাত ৮টা থেকে সাড়ে আটার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীম তার সঙ্গী মিথুনসহ তিনজন বুন্দলিতলা বাজারে আসে। সেখানে আমার সাথে কথা প্রসঙ্গে ইব্রাহীম বলেন, “আমি গরু কিনেছি তাই নিতে এলাম। এরপরে তারা আমাদের গ্রামে গিয়ে আমার চাচাত ভাই নসিমন চালক রিংকুর সাথে গরু নেওয়ার জন্য কথা বলে। তখন রিংকু বলে আমি চোরাই গরু নিতে পারবো না। এরপরে রাত ৯টার সাথে ৯টার দিকে ইব্রাহীমদের সাথে আবারো আমার দেখা হয়। এবং ভোররাতে ( মানুষ দেখা যায় এমন ভোর)গরু নিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীম উপস্থিত ছিল বলেও জানান ফারুক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ওই গ্রামের কৃষক শফিকুল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা এবং উপজেলা ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতা গরু ছিনতায়ের ঘটনায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীমের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তারা বলেন যেহেতু ফারুক নিজেও এই ঘটনার সাথে জড়িত তাই তার বর্ননা শতভাগ সত্য।

এঘটনায় চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, এবিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এঘটনায় চৌগাছা থানায় কোনো অভিযোগ না হলেও ৭ নভেম্বর গরু কেনাবেচা সংক্রান্ত একটি বিষয়ে মহেশপুর থানায় সুমনের মামা আকতারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ জমা হয়। অভিযোগের বিষয়টি মহেশপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আসাদ নিশ্চিত করেছেন।