দুই জঙ্গি ছিনতাই: অপারেশনে নেতৃত্ব দেন আইমান

ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে-মুখে পিপার স্প্রে মেরে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান। তার নেতৃত্বে আদালত প্রাঙ্গণে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে এ অপারেশনে অংশ নেয় ১০ থেকে ১২ জন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাত মাস আগে ভুয়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনলাইন থেকে মোটরসাইকেল কেনে বাইরে থাকা জঙ্গি সদস্যরা। এরপর কারাগার থেকে আদালত পর্যন্ত পুরো পথই একাধিকবার রেকি করেছিল তারা।

প্রথমে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতো প্রিজনভ্যানে হামলার করে সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে কাশিমপুর থেকে পুরান ঢাকায় আদালত পর্যন্ত আনা-নেওয়ার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাদের। তাই তুলনামূলক কম নিরাপত্তা থাকায় ছিনতাই অপারেশনের স্পট হিসেবে বেছে নেয় আদালত প্রাঙ্গণকে। আর জঙ্গি সদস্যদের ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল সহযোগিরা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিদের ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটে। শামীম ও সোহেলকে তাদের সহযোগিরা নিয়ে যেতে পারলে আরাফাত ও সবুর আটকা পড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০) ফেলে চলে যায় জঙ্গিরা। বর্তমানে সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালি থানায় রয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারী জঙ্গি মশিউর রহমান ওরফে আইমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি আসামি ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড হলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক মেজর (বহিষ্কৃত) সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তার অনুমতিতে এ ছিনতাই অপারেশন পরিচালনা করেন সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মশিউর রহমান ওরফে আইমান। গ্রেফতার থাকা জঙ্গি আরাফাত ও সবুরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, কনডেম সেলে থাকা ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিরা প্রায় মোবাইল ফোনে যোগযোগ করতেন।

জানা গেছে, ঘটনার পর তদন্তের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ নভেম্বর) সিটিটিসি একাধিক টিম কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার পরিদর্শনে যায়। প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তারা কারাগার থেকে কার মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে জঙ্গিরা বাইরে যোগাযোগ করেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই অপরারেশনে নেতৃত্বদানকারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এ অপারেশনে তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীকেও শনাক্ত করা হয়েছে।

‘জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে নেতৃত্বদানকারীসহ সবাইকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি’- যোগ করেন পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এদিকে বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির প্রথম নিবন্ধন হয় হাসান আল মামুন নামে। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা। এ মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর KC39EA000**** এবং চেসিস নম্বর PS0KC3990KH****। রেজিস্ট্রেশন আইডি 62-3844591।

এরইমধ্যে ওই মোটরসাইকেলের মালিক হাসান আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তারা জানান, হাসান গত মে মাসে অনলাইন মার্কেটপ্লেস বিক্রয় ডটকমের মাধ্যমে তার মোটরসাইকেলটি বিক্রি করেছিল। মোটসাইকেল কেনার সময় ক্রেতা হাসানকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছিল। সেখানে আতিকুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

এদিকে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ দুই জঙ্গি পালানোর ঘটনায় র‍্যাব আদালত প্রাঙ্গণ, অন্যান্য জায়গা, সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ কাজ করছে।

পালিয়ে যাওয়া দুজন জঙ্গির পূর্ববর্তী অপরাধের ধরণ, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন সময় চলাচলসহ সবকিছু র‍্যাব পর্যালোচনা করছে বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।