সব ওয়ার্ডে সমাবেশ করবে আ.লীগ

ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর শনিবার বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ দিন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে রুখতে রাজধানীর সব ওয়ার্ডে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। আগের দিন ৯ ডিসেম্বর শুক্রবারও রাজধানীতে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সেদিন বিকাল ৪টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণে স্টেডিয়ামের ২নং গেটের সামনে (বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসংলগ্ন) এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই ধরনের সমাবেশ করবে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগও। ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠনের নেতাদের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলের গুম ও খুনের চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে। এদিকে আজ থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় সতর্কাবস্থান নেবে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। সরকার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রোববার চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঢাকায় গণসমাবেশ নিয়ে বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর তারা ঢাকা শহর নাকি দখল করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, আর আওয়ামী লীগ বসে থাকবে?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ থেকে সব পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারা বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশকে ইঙ্গিত করে মঙ্গলবার ছাত্রলীগের সম্মেলনে এ নির্দেশনা দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে বলেন, সব মহল্লায়, পাড়ায়, জেলায়, মহানগরে, ওয়ার্ডে, ইউনিয়নে, উপজেলায়, থানায় সব জায়গায় সতর্ক পাহারা বসাতে হবে। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষের জানমাল নিরাপদ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় বিএনপির শনিবারের গণসমাবেশকে উদ্দেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় বলেন, কারও (বিএনপি) আস্ফালন, কারও ঘোষণা বা কারও স্বপ্নে দেশ চলবে না। বাংলাদেশ চলবে এ দেশের জনগণের ম্যান্ডেটে। সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সে জন্যই কারও আস্ফালন কিংবা কারও ঘোষণায় বাংলাদেশের মানুষ কাউকে ভয় পায় না। এসব নিয়ে দেশের মানুষ আতঙ্কিত নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর বার্তা ১০ ডিসেম্বরকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, এ দিন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ও এ দাবি মেনে নেওয়ার আলটিমেটাম দেবেন। দিনটি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাই দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে ১০ ডিসেম্বর। প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এ দিন তাদের ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের ইতি টানবে ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে। ১০ ডিসেম্বরের এ গণসমাবেশে বিপুল লোকসমাগম করতে চায় তারা। এ নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক প্রহরাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে।
১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের বিপুল সমাগম দেখা গেছে। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির এতদিনকার রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর তুলনায় ধারাবাহিক সমাবেশগুলো ছিল ব্যতিক্রম। এরপর ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় গণসমাবেশ হবে ১০ ডিসেম্বর। বিএনপির ঢাকার এই গণসমাবেশে যাতে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে না পারে সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিএনপির বড় জমায়েত রুখে দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে বিশেষ বার্তা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কী করবে তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তাদের বলা হয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে শনিবার ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করবে। এদিকে দলের নেতাদের একটি তালিকা করতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ওই তালিকায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কোন ওয়ার্ডের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীনে ২৬টি থানা ইউনিট, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ৮০২টি ইউনিট এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা ইউনিট, ৭৫টি ওয়ার্ড ও ৬০৫টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা পাহারা বসাবে।