কাঁটাতারে কিশোরী ফেলানী খাতুনের মরদেহ ঝুঁলে ছিল প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা। সে ঘটনা নাড়া দিয়েছিল গোটা দেশকে। এরই মধ্যে কেটে গেছে এক যুগ। এই দীর্ঘ সময়ে হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে হয়েছে ‘প্রহসন’। আত্মস্বীকৃত খুনিকে দুইবার খালাস দেয় আদালত। দুইবারই রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচার চেয়ে এখন আদালতের দিকে চেয়ে ফেলানীর স্বজনেরা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারি গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে ফেলানী। বাবার হাত ধরে ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রাম থেকে বাংলাদেশে কলোনিটারির বাড়িতে আসার পথে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারায় কিশোরী ফেলানী।
প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। সেই ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজর কারে।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু সমকালকে বলেন, ‘আমার চোখের সামনে মেয়েটাকে নির্যাতন করেছে। পাখির মতো গুলি করে মেরেছে। খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। ভারতে স্বাক্ষ্য দিয়ে আসলাম। অমিয় ঘোষ নিজে গুলি করার কথা স্বীকার করেছে। তারপরও রায়টা পাচ্ছি না আমি। ১২টা বছরতো গেল, আর কত? চোখে তো আর পানি নাই। আগে প্রশাসন থেকে অনেকে যোগাযোগ করতো। এখন করে না।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ছোট মেয়েটারে সুখী করতে বিয়ে দিতে চাইছি। সেই মেয়েটাকে তারা মেরে ফেলেছে। অমিয় ঘোষের শাস্তি না হলে আমার মেয়ে শান্তি পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। আমার আবেদন- দুই দেশের সরকার মিলে বিচারটা করে দিক।’
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে ঘটনার আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফর সদর দপ্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ফেলানীর বাবা ও মামার স্বাক্ষ্য শেষে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় কোর্ট।
এ রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। রায় প্রত্যাক্ষান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম পুনরায় বিচার চেয়ে ভারতীয় হাই কমিশনারের কাছে করা আবেদন ১৩ সেপ্টেম্বর রিভিশন ট্রায়াল ঘোষণা করে। পুনরায় বিচারিক কার্য শেষে ২০১৫ সালের ২ জুলাই বিএসএফের আধিকারী সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক প্যানেলের রায়ে আবারও খালাস পায় অমিয় ঘোষ।
সে রায়ের বিরুদ্ধে ফেলানীর বাবা ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু ওই বছরের ১৩ জুলাই রিট গ্রহণ করলেও শুনানি দুইবার পিছিয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি পর আর কোনো কার্যাদেশ নেওয়া হয়নি।