গৃহবধূকে দুবাই পাচার করে পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে গ্রেফতার-১

দারিদ্রতা ও অসহায়ত্বর সুযোগ নিয়ে মরিয়ম আক্তার পপি (২৪) নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ভাল বেতনে বিদেশে (দুবাই) নিয়ে দেশে এক নারী ও বিদেশে তার মেয়েকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর অভিযোগে যশোর কোতয়ালি মডেল থানায় মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। পুলিশ মানব পাচার মামলার মোছাঃ রেহেনা বেগম (৪৭) নামে এক গৃহবধূকে গ্রেফতার করেছে। তিনি যশোর সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী। শনিবার রাতে মামলাটি করেন, নড়াইল জেলার সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের বাবুল উদ্দীন খানের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা মোছাঃ মরিয়ম আক্তার পলি। মামলায় আসামীরা করা হয়েছে, মোছাঃ রেহেনা বেগম ও তার মেয়ে দুবাই বসবাসরত মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মোছাঃ রুম্পা খাতুনসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩জন।

মামলায় বাদি উল্লেখ করেন,তার বয়স যখন ৬ দিন তখন তার পালিত মা পারুল আক্তার তাকে দত্তক নেয়। তারপর থেকে তিনি পালিত মায়ের কাছে থেকে বড় হয়। বাদির পালিত মা বাদিকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করায়। বিগত ২০১৪ সালে বাদিকে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক নড়াইলের শেখহাটি গ্রামের সোহাগ এর সাথে বিয়ে দেন। বাদির গর্ভে তার স্বামী সোহাগের ঔরষে ১টি ছেলে সন্তান হয়। বর্তমানে তার নাম আলহাম (৭)। বাদির স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় বিগত ২০২১ সালে বাদি তার স্বামী সোহাগকে ডিভোর্স দেয়। ডির্ভোসের পর থেকে বাদি তার পালিত মা পারুল আক্তারের বাড়িতে বসবাস করে।

বাদি অত্যন্ত গরীব। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে তার দিন চলে। মোছাঃ রেহেনা বেগম ও তার মেয়ে মোছাঃ রুম্পা খাতুন বাদির পরিবারের পূর্ব পরিচিত। বাদির অসহায়ত্বর সুযোগ নিয়ে আসামী রেহেনা বেগম ও তার মেয়ে রুম্পা খাতুন বাদিকে বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে বাদিকে বৈধ ভিসার মাধ্যমে ভাল বেতনে বিদেশ (দুবাই) নিয়ে যাবে মর্মে ২লাখ ৫০ হাজার টাকায় ওয়ার্কি ভিসার মৌখিক চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক বাদি মা মেয়েেেদর বাড়িতে বসে বাদির স্বাক্ষীদের সামনে গত বছরের ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর নগদ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে আসামীরা বাদিকে খুব দ্রুত বিদেশ পাঠাবে বলে আসামীদের বাড়িতে যেতে বলে। আসামীদের কথা মতো বাদি গত বছরের ২৫ নভেম্বর বিকেল ৩ টায় তাদের বাড়িতে যায়। রেহেনা বেগমের বাড়িতে যাওয়ার পর বাদিতে বিদেশ নিয়ে যাবে মর্মে একদিন পর ২৭ নভেম্বর বেলা অনুমান ১১ টায় মানব পাচারকারী মোছাঃ রেহেনা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের সহায়তায় বাদিকে যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া বাস স্ট্যান্ডে এনে হানিফ পরিবহন যোগে ঢাকায় নিয়ে যায়।

রেহেনা বেগমসহ ঢাকায় দুইদিন অবস্থান করার পর ৩০ নভেম্বর রাত ৮ টায় ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে বিমান যোগে দুবাই পাঠায়। দুবাই পৌছানোর বাদিকে দুবাইয়ের এয়ারপোর্টের মোছাঃ রেহেনা বেগমের মেয়ে মোছাঃ রুম্পা খাতুন বাদিকে রিসিভ করে দুবাই তার বাসায় নিয়ে যায়। দুবাইয়ে বাদিকে নিয়ে মোছাঃ রুম্পা খাতুন বাদির পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। বাদিকে দুবাইয়ের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক পতিতাবৃত্তির কাজে বাধ্য করে। বাদি নিরুপায় হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হয়। বাদি তখন বুঝতে পারেন মা রেহেনা বেগম ও তার মেয়ে রুম্পা খাতুন পরস্পর যোগসাজসে বাদির পরিবারের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে পতিতাবৃত্তির জন্য বিদেশে পাচার করেছে।

বিদেশে মোছাঃ রুম্পা খাতুন বাদিকে একটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। দুবাইতে বাদি ২৮ দিন অবস্থানের পর কৌশলে পালিয়ে দুবাইয়ের পুলিশের কাছে যায়। দুবাইয়ের পুলিশকে নিয়ে রুম্পা খাতুনের কাছে যায়। দুবাইয়ের পুলিশের সহায়তায় বাদি তার পাসপোর্ট উদ্ধার করে এবং দুবাই পুলিশের সহায়তায় ২৯ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন। দেশে বাদি আসার পর তার পালিত মা পারুল আক্তার বোন রোকেয়া আক্তারকে বিস্তারিত ঘটনার বিষয় বিস্তারিত বলেন। ঘটনার বিষয় স্থানীয় আরো অনেকে অবগত আছেন। পরে যশোর এসে পুলিশের সহায়তায় মোছাঃ রেহেনা বেগমের বাড়িতে হাজির হয়ে পুলিশ রেহেনা বেগমকে গ্রেফতার করে বাদি ১৪ জানুয়ারী রাতে থানায় মামলা দেন। ১৫ জানুয়ারী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানব পাচারকারী নারী রেহেনা বেগমকে আদালতে সোপর্দ করে।