‘সাজা চাই না, সন্তানদের কাছে ফিরে আসুক আল আমিন’

বয়স ৩ বছর ৩ মাস। মেহেমুদ আমিন মোহায়মিন। মোহায়মিনের বয়স যখন ৬ মাস তখন বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর নেননি কোনো খোঁজ খবর। তবে তার বড় ভাই ৭ বছরের মাহমুদ আমিন মিনহাজ বাবাকে কাছে পেতে চায়।

মোহায়মিন ও মিনহাজ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেশার আল আমিন হোসেনের ছেলে। যারা বাবার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। সংসার টিকিয়ে রাখতে আড়াই বছর ধরে লড়াই করছেন স্ত্রী ইসরাত জাহান। পরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন তার স্ত্রী।

সম্প্রতি সেই মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতম আইনের ১১ (গ) ধারায় আল আমিনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. সোহেল রানা। আল আমিনের বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড হতে পারে। হতে পারে অর্থদণ্ডও।

তবে স্বামী আল আমিনের সাজা চান না স্ত্রী ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, আল আমিনের সাজা চাই না। সে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। আমরা সেই আশায় আছি।

ইসরাত জাহান বলেন, আমি এখনও আল আমিনের সঙ্গে সংসার করতে চাই, মীমাংসা করতে চাই। আমার দুই সন্তান বাবার আদর ছাড়া বড় হচ্ছে। যা হওয়ার হয়েছে। আল আমিন ফিরে আসুক। আমার সন্তানরা ওর বাবার আদর, ভালোবাসা পাবে। আমি চাই না তার সাজা হোক।

তিনি বলেন, ছোট ছেলেটা বাবাকে তেমন বোঝে না। বড়টা বাবাকে মিস করে। বলে, বাবা এই জায়গায় থাকলে ভালো হতো। তার চাওয়া বাবা সব সময় যেন পাশে থাকে। কিন্তু ওর বাবা তা বোঝে না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। আমরা যে যোগাযোগ করবো সেই উপায়ও নেই। সব জায়গা থেকে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। তবুও আশায় আছি, সে ফিরে আসবে।

ইসরাতের আইনজীবী শামসুজ্জামান বলেন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের মামলায় সম্প্রতি আল আমিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট এসেছে। যে ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, সেই ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এখানে ফয়সালার একটা সুযোগ আছে। আল আমিন চাইলে ফয়সালা করে আবার আবার সংসার করতে পারে। যদি সেটা না করে তাহলে তার সর্বোচ্চ সাজার জন্য আমরা আইনিভাবে লড়ে যাবো।

এদিকে, আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা উল্লেখ করেন, মারধরের ঘটনার আগে গত বছরের আগস্ট মাসে যৌতুকের ২০ লাখ টাকা না দিতে বিষয়টি মিমাংসার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করেন ইশরাত জাহান। এ অভিযোগে ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট দুই পক্ষকে হাজির হতে বলে মানবধিকার কমিশন। নির্ধারিত ওই তারিখে বেলা ১১টায় আল আমিন ও তার স্ত্রী হাজির হয়ে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এসময় কমিশন থেকে মিমাংসার কথা বলা হলে আল আমিন আপত্তি করেন। এরপর বাসায় ফিরে ওই দিনে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আল আমিন তার স্ত্রীকে মানবধিকার কমিশনে কেন অভিযোগ দিয়েছে জানতে চান। এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে তার বাবার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা আনার কথা বলেন। কিন্তু ইশরাত রাজি না হওয়ায় তাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষিসহ লাথি মেরে জখম করেন। এরপর বাসা থেকে বের করে দেন। ২০ লাখ টাকা না এনে দিলে তার সঙ্গে সংসার করবেন না বলে জানান। পরে ইশরাত তার চাচা ও চাচাতো ভাইকে জানালে বাসায় এসে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আদালতে মিরপুর থানার নারী ও শিশু নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ মামলাটির চার্জশিট দেখেন। এরপর বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ মামলাটি বদলির আদেশ দেন।