প্রধানমন্ত্রী কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার কালশী ফ্লাইওভার এবং ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নকাজ উদ্বোধন করবেন। কালশী ফ্লাইওভারে সূচনা হবে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত। ওই এলাকার নিত্য যানজট কমে আসার পাশাপাশি রাজধানীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দুই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে বাঁচবে প্রায় এক ঘণ্টা। সব মিলিয়ে ১ কোটি নগরবাসী সরাসরি এ ফ্লাইওভারের সুফল পাবেন। এ জন্য প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

জানা গেছে, কালশীর বালুর মাঠে হবে ফ্লাইওভারের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সকাল ৯টার মধ্যে অনুষ্ঠানে আগত নগরবাসী ও অতিথিদের আসন গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে ফলক উন্মোচন করবেন। এর পর বক্তব্য দেবেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল শনিবার মেয়র আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সমকালকে বলেন, যানজটে প্রতিদিন নগরবাসীর কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে অপচয় হচ্ছে প্রচুর জ্বালানি। এসব ভোগান্তি কমাতে সরকার মেট্রোরেল, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরই একটি কালশী ফ্লাইওভার চালু হলে মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মিরপুর-১২ থেকে বনানী, মহাখালী, রামপুরা, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকার যাতায়াত সহজ হয়ে যাবে। অন্তত ১ কোটি নগরবাসী সরাসরি কালশী ফ্লাইওভারের সুফল পাবন।

যানজট নিরসনে ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প নেয় সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার রাস্তা এবং ২ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য পাঁচটি র‌্যাম্প, কোথাও কোথাও রয়েছে দুই থেকে চার লেন রাস্তা। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ ৬ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত মেয়াদের চার মাস আগেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডিএনসিসি ও সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

প্রকল্পের ডিএনসিসি অংশের প্রকল্প পরিচালক আরিফুর রহমান জানান, পুরো প্রকল্পের ৯৮ দশমিক ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে। ফ্লাইওভার ও মূল সড়কের সব কাজ শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই যান চলাচলে খুলে দেওয়া হবে।

সরেজমিন গতকাল দেখা যায়, ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ায় প্রতিটি র‌্যাম্পে তার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে উদ্বোধনের আগে কোনো যানবাহন উঠতে না পারে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও উদ্বোধন ঘিরে কালশীর পুরো সড়ক ধুয়েমুছে সাফ করা হয়েছে। মিডিয়ানে নানা ধরনের ফুলগাছ লাগানো হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিরপুর, মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বনানী ফ্লাইওভার পর্যন্ত কালশী সড়ক করা হলেও যানজট লেগেই থাকে। এতে বৃহত্তর মিরপুর থেকে রাজধানীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাতায়াতকারীরা ভোগান্তির শিকার হন। কালশী ফ্লাইওভার চালুর পর এ রুটে কাউকে যানজটে আটকে থাকতে হবে না। পল্লবীর বাসিন্দা উজ্জ্বল কান্তি বিশ্বাস জানান, প্রতিদিন তাঁকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুরে যেতে কালশীর যানজটেই এক ঘণ্টার বেশি নষ্ট হয়। এর পর বিমানবন্দরের সামনে থেকে শুরু হয় যানজট। এখন অন্তত কালশীর যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ডিএনসিসি জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ছয় লেনের রাস্তা করা হয়েছে। মাঝে রয়েছে ১ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ান। অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তার দুই পাশে রয়েছে ৩ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস রোড। উভয় পাশে রাখা হয়েছে ২ মিটার প্রশস্ত ড্রেন ও ফুটপাত। দুটি করে ফুট ওভারব্রিজ ও পুলিশ বক্স। প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ফ্লাইওভার উদ্বোধন ঘিরে মেট্রোরেল বন্ধ থাকবে না। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে অন্যদিনের মতো মেট্রোরেল চলাচল করবে।