ঝিনাইদহ জেলাব্যাপী চোরের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ, নেই কোন প্রতিকার

ঝিনাইদহ জেলাব্যাপী চোরের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ নেই কোন প্রতিকার।শহরের উপ-শহরপাড়ার কলেজ ছাত্র হারুন অর রশিদ পড়ার টিবিলের উপর মোবাইল ও মানিব্যাগ রেখে কিছু সময়ের জন্য পাশের রুমে যান। মুহুর্তের মধ্যে তার মোবাইল ও মানিব্যাগ উধাও হয়ে যায়। ছাত্রাবাসের বাইরে বেরিয়ে তিনি জানতে পারেন মহল্লার একাধিক বাড়িতে চোরে হানা দিয়েছে। একই পাড়ার সুমন ব্যানার স্ত্রী হেনা বেগম জানান, তিনি বাড়িতে ঢুকে দেখেন এক অপরিচিত মহিলা তার ঘরে ঢুকে আলমিরা ও ড্রয়ার তছনছ করছে। গৃহবধু মিনারা আসিফ জানান, তার ঘরের জানালা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পেছন ভেঙ্গে চোরেরা জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের নাইমুল হকের মেয়ে সুমাইয়া চোরকোল গ্রামে মায়ের সঙ্গে ধর্মসভা শুনে এসে রাত ১২টার দিকে ঘরে শুয়ে পড়েন।

রাত ৩টার দিকে তার গলায় থাকা সোনার চেইনটি চোরে ছিড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। দরিদ্র ঘরের মেয়ে সুমাইয়াকে তার পিতা খুব কষ্ট করে আটআনা ওজনের সোনার চেইনটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। একই গ্রামের নাজমুস সাকিব জানান, তিনি ঘরে শুয়ে ছিলেন। মধ্যরাতে একটি অপচিতি হাত জানালা দিয়ে তার মোবাইল নিতে উদ্যোত হলে তিনি চিৎকার করে উঠেন। গত ২৬ ফেব্রয়ারি সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের মশিয়ার রহমানের দোকানের তালা ভেঙ্গে চোরেরা জিনিসপত্র,মালামাল,টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।এ ভাবে সারা জেলায় চোরের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘরে চুরি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানে চুরি হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন শহর থেকে মটরসাইকেল চুরি হচ্ছে। সংসারে অভাব অনটন ও ব্যবসায়ীক আর্থিক মন্দার মধ্যে জেলাব্যাপী এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে মানুষ। পুলিশ চোর ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করলেও পরিস্থিতি স্বভাবিক হওয়ার কোন লক্ষন নেই।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে,শহরের পবহাটী গ্রামে ২/৩ মাসের ব্যবধানে দুটি বাড়িতে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।পরদিকে সদর উপজেলার ঘোড়ামাারা গ্রামে একই চক্র ডাকাতি সংঘটিত করে।সম্প্রতি সদরের ভোড়–য়াপাড়া গ্রাম থেকে দুটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে যার আনুমানিক মুল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বলে জানাযায়।

ডিবি পুলিশের সাইবারক্রাইম বিভাগ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৯ ফেব্রয়ারি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ধুলোজোড়া গ্রামের রঙ্গু শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম, কান্দাকুল গ্রামের রমজান শেখের ছেল সুমন শেখ, মালিখালী গ্রামের রঙ্গু মোল্লার ছেলে মতজেল মোল্লা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল জলিল, সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আখিরন নেছা শিউলী ও মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে মেরিনা খাতুন বৃষ্টিকে গ্রেফতার করে। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল নামে এক ডাকাত সদস্য স্বীকার করে যে, তারা ডাকাতি মামলার হাজিরা দিতে ঝিনাইদহে এসে পবহাটী ও ঘোড়ামারা গ্রামে ডাকাতির কাজে অংশ নেয়। এদিকে গত ২১ ফ্রেব্রয়ারি মহেশপুর উপজেলার বোয়ালিয়া নামক স্থানে দিনদুপুরে রাস্তায় দড়ি বেধে ছিনতাই করা হয়। ঘটনার দিন ভারতগামী বাংলাদেশী যুবক রাসেল আহম্মেদ শাওনের প্রাইভেট কারটি থামিয়ে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল, হাতঘড়ি ও স্ত্রীর সোনার চুড়ি এবং কানের দুল নিয়ে যায়। সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন এলাকাবাসির উদ্বৃতি দিয়ে গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, সাধুহাটি গ্রামের ধর্মতলা পাড়ার খুশিদের একটি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়া উত্তরনারায়নপুর স্কুল পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আজিজুলের নামাজে জানাাজা চলা মুহুর্তে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১২০ বস্তা চাল চুরি হয়েছে। এ ভাবে প্রায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছোটখাট চুরির ঘটনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

সচেতন মহল মনে করছেন, আর্থিক মন্দা ও দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির কারণে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্রামে ও পাড়া মহল্লায় পালাক্রমে পাহারা বসিয়ে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেণ। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড মেম্বর ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নিদেৃশনা দিলে চুরির ঘটনা কমে আসতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুুর রহমান বলেন, চোরের উপদ্রব রুখতে অভিযান জোরদার করা হযেছে। এছাড়া বিশাল জেলায় চুরি ঠেকাতে শুধু পুলিশের অভিযান বা টহল কার্যকর ভুমিকা রাখা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় এলাকাবাসী ও কমিউনিটি পুলিশের সম্পৃক্ততা দরকার। যে কারনে পুলিশের পাশাপাশি এলাকাবাসীদের জোটবদ্ধ হয়ে পাহারা দেয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে পাড়া মহল্লায় সভা-সমাবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।