যশোরে শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের তদন্তে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা

যশোরে ছাত্রীদের সাথে প্রধান শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের অভিযোগের তদন্তে গিয়ে অসম্পন্ন রেখেই ফিরে গেলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম আজম। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা সফল করতে না পেরেই তিনি ফিরে গেলেন বলে জানা গেছে।

সে কারণে বুধবার বিকেলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সদর উপজেলার জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দুইজন সদস্য এই স্মারকলিপি দিয়েছেন।

তবে জেলা প্রশাসক এবার বিষয়টি নিজেই দেখবেন বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী দীর্ঘদিন ধরে জোর পূর্বক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন চালিয়ে আসছিলেন। নবম ও দশম শ্রেণির শতাধিক ছাত্রীদের সাথে এই কর্মকা-ের কারণে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর মা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন।

পাশাপাশি এই ঘটনাটি জানতে পেরে ওই স্কুলের দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে অভিযোগ দেন। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টু তার কক্ষে থাকা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন।
ফলে সব অভিযোগ যখন ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিক তখনই কমিটির দাতা সদস্য ও অভিভাবক সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং নাজিম উদ্দিন এই ব্যাপারে ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দেন। জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ ২৪ দিনেও ঘুম ভাঙ্গেনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম আজমের। আবেদনকারীদের অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে যেতে কালক্ষেপন করেছেন। এমনকি জুলফিকার আলীর সাথে যোগাযোগ করে তিনি বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে নানা অপকৌশল অবলম্বন করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে একাধিকবার ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ধর্না দিয়ে গতকাল ২২ মার্চ তিনি তদন্তের জন্য সরেজমিনে গিয়েছেন। তবে স্বাভাবিক ভাবে তদন্তের জন্য নয়! শিক্ষা কর্মকর্তা জঙ্গলবাধাল স্কুলের ভুক্তভোগী এবং অভিযোগকারীদের কোন বক্তব্য শুনতে রাজি নয়। তিনি এই ঘটনা তদন্তে প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করতে বহিরাগত কয়েকজন লোকের কাছে হ্যা’ অথবা না’ মতামত প্রদানের জন্য সাদা কাগজে লিখে দেয়ার জন্য বলেন। এসময় অভিযোগকারী নাজিম উদ্দিন ভুক্তভোগীদের বক্তব্য গ্রহণের জন্য ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন। এসময় তদন্ত কাজ অসম্পন্ন রেখেই সেখান থেকে চলে গেলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলঅম আজম।
ফলে ঘটনাটি ঘটার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে নানা ধরণের অপকৌশল অবলম্বন করে আসছিলেন ওই শিক্ষা কর্মকর্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক ছাত্রীর সাথে যৌন নিপীড়ন চালানো প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর পক্ষ নিয়ে কালক্ষেপন করে এবং গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে যে চেষ্টা করেছেন তারই প্রমান বহন করে।
সেকারণে গতকাল বিকেলে ওই স্কুলের দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম ও অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দিন শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।