মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নিয়ে বিএনপি বক্তব্য কী? 

bnp logo

ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

এদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ। পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থন করতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় আরও বলা হয়, যাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে; তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। তার বাইরেও কেউ যদি নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তবে তাকেও ভিসা দেওয়া হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতির প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ব্যক্তিগতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয়েছে; তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকারি দলের নেতা এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা রয়েছেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞায় কিছুই যায় আসে না। এমনকি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন, ব্যবসা করেন। তার সম্পদও যদি যুক্তরাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করে তাতেও কিছু আসে যায় না।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি বেশি চিন্তিত। কারণ ভিসানীতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ভিসা দেওয়া হবে না বলা আছে। বিএনপি নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী। মার্কিন এই ভিসার বিধিনিষেধ আরোপকে বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

‘সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের নির্যাতন, গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রকম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগকে ইতিবাচকভাবে দেখি। দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তারপর এখন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের এই সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা নিয়ে আমাদের এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের দেশে কাকে ভিসা দেবে নাকি দেবে না এটা তাদের ব্যাপার। আমাদের এত কথা বলারও কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন কিন্তু আমাদের দেশে এতগুলো রোহিঙ্গা পাঠানোর কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না। এটা কিন্তু চিন্তার বিষয়।

বিরোধী দলের সদস্যদের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, সরকারের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের জন্যই এটি চিন্তার বিষয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এটি আমাদের দেশের জন্য প্রাপ্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন, এ জন্য বিএনপিসহ বিরোদী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী।’

মির্জা ফখরুল ভিসানীতিকে সাধুবাদই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়তার লক্ষ্যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। তখন তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে-এমন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অর্থ হলো-ভোট কারচুপি, ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধাদান, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়াকে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া। এসব কর্মকাণ্ডের জন্যও ভিসানীতির প্রয়োগ হতে পারে।