মার্কিন প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের যা বলল বিএনপি

রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল।

পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

মার্কিন পর্যবেক্ষক দলকে বিএনপির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে সম্ভব নয়। তাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।

বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উইংয়ের প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে,’ বলেন আমির খসরু।

প্রশাসন ও বিচারবিভাগ দলীয় করণ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। তারা ভোট চুরির প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, লুটেরা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ তারা একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে আবারও তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরি করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

‘এখান থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের যে একদফা দাবি; সরকার বলা ভুল হবে—এই রেজিমের পদত্যাগ করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার মতমতের ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে,’ বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরা কী বলেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। এটার সঙ্গে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অথবা নিরপেক্ষ সরকারের কোনো ব্যবধান নেই। শেখ হাসিনার অধীনের নির্বাচন হলে যেটা তারা বলছে, এটা হবে না। এগুলো হবে না বলেই তারা কথাগুলো বলছে। তারা তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার-নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলতে পারে না! এই দাবি উঠতে হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। তারা যে কথাগুলো বলছে; এই দাবির সঙ্গে কোনো তফাৎ নেই।

বিএনপির সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন— স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উইংয়ের প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

অন্যদিকে মার্কিন পর্যবেক্ষক দলে রয়েছেন রিক ইনডারফার্ত, মারিয়া চিন আব্দুল্লা, মারিও মাইত্রি, জেমি ক্যানডেস সাক্স স্পাইকারম্যান, আকাশ কুল্লুরি, বোনি গ্লিক, জামিল জাফের, জো কাও প্রমুখ।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় পৌঁছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সাত সদস্য। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করবে তারা। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।

প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম সম্পর্কে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানান, দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ঢাকার বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলবে।

সফর শেষে প্রতিনিধিদলটি বিবৃতি দেবে উল্লেখ করে ব্রায়ান শিলার জানান, ইতিবাচক প্রবণতা এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তারা কিছু সুপারিশ তুলে ধরবেন। সর্বোপরি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিন সীমিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে কিনা, তা নির্ধারণ করা হবে এ প্রতিনিধিদলের সুপারিশের মাধ্যমে।

এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ সদস্যের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। তবে আরও একজন বাড়িয়ে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে।