যশোর পৌরসভার হেরিটেজ মার্কেটের দোকান বরাদ্দে অনিয়ম ও
দুনীর্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৭৩ টি দোকানের মধ্যে প্রথম
পর্যায়ে ৬০ টি দোকান টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দের কথা বলা হলেও তা করা
হয়নি। এ ছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ দোকান বরাদ্দ নিয়ে চলছে নানা
ধরনের তালবাহানা ও ছলচাতুরি। পৌর মেয়রসহ ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে
অবৈধ ভাবে ১৩ টি দোকন ভাগ বাটোয়ারার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
আর এই অবৈধ ভাগবাটোয়ারাকে বৈধতা দিতে কথিত লটারি নামে
যশোরবাসির আইওয়াশ করা হয়েছে। একই ভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া
হলেও সেসব পত্রিকা মার্কেটে ছাড়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেও
দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করা হয়েছে।
পৌরসভার একাধিক সূত্র ও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে জানা
যায়, ২০১৮ সালে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে পৌরসভার
হেরিটেজ মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় হয় ২০ কোটি
৮১ লাখ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
মার্কেটটিতে রয়েছে ৭৩টি দোকান। দোকানের আয়তন ১০০ বর্গফুট
থেকে ১৪০ বর্গফুট। প্রথম পর্যায়ে মার্কেটের ৬০ টি দোকান বরাদ্দের
জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সিডিউলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩
হাজার টাকা। ২৩ এপ্রিল থেকে সিডিউল বিক্রি শুরু করা হয়।
সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১২ মে পর্যন্ত। এরপর ১৩
মে জমাদান ও টেন্ডার খোলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নিদিষ্ট দিনে
প্রথম পর্যায়ের টেন্ডার বক্স খোলা হয়। কিন্তু ২৩ মে লটারি হওয়ার কথা
থাকলেও লটারি করা হয়নি। অনিবার্য কারণবসত মেয়র হায়দার গনি খান
পলাশ ১৯ দিন পিছিয়ে ১১ জুন লটারির দিন ধার্য করে। এদিকে প্রথম
পর্যায়ের ৬০ টি দোকান বরাদ্দ দেয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ টি
দোকান বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জায়েদ
হোসেনের কাছে ১৩ টি দোকান কিভাবে বন্টন করা হবে জানতে
চাইলে তিনি বলেন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈধ ভাবেই দ্বিতীয় পর্যায়ের
১৩ টি দোকান বরাদ্দ করা হবে। আপনারা জানতে পারবেন। গত ৪ জুন পৌর
ভবনে জায়েদ হোসেনের চেম্বারে তিনি এ কথা বলেন। এরপর ৯ জুন
আবার জায়েদ হোসেনের চেম্বারে গেলে তিনি বলেন দ্বিতীয় পর্যায়ের
দোকান বরাদ্দের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। আমি জানি না। ৮ জুন
রাতে আমাকে জানানো হয়েছে। ১১ জুন মঙ্গলবার প্রথম পর্যায়ের ৬০
টি দোকানের সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ দোকানের লটারি হবে। অথচ
দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ দোকান বরাদ্দের সিডিউল কখন বিক্রি করা হলো কত
গুলি সিডিউল বিক্রি হলো কবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলো পৌরসভার
কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারিসহ যশোরবাসি কেউই জানেন না। ফলে
পৌর মেয়রের এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ডে যশোরবাসিসহ ব্যবসায়িরা
প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এমনকি দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ টি দোকান বরাদ্দের
কতগুলি সিডিউল বিক্রি হয়েছে বা হয়নি তাও গোপন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ মে ভোরের কাগজ ও দৈনিক রানারে
দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩টি দোকান বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
পরবর্তীতে আবার ৩ জুন দৈনিক রানারে এর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
করা হয়। কিন্ত যে দুইটি কাগজে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩টি দোকান
বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ওই দুইটি কাগজ বাজারে ছাড়া হয়নি।
পৌর কর্তৃপক্ষ ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ওই দিনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত কাগজ
নিজেরা গুপ্তি করে বাজারে ছাড়া বন্ধ রাখে। অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র
হায়দার গনি খান পলাশ ও ১২ জন কাউন্সিলর মিলে ১৩ টি দোকান অবৈধ
ভাবে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
ইতিমধ্যে ১১ জুন মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার হল রুমে কথিত লটারির
মাধ্যমে পৌরমেয়র হায়দার গনি খান পলাশ ও ১২ জন কাউন্সিলর ১৩ টি
দোকান অবৈধ ভাবে ভাগবাটোয়ারার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
পৌরমেয়রের সাথে অবৈধ ভাবে ভাগবাটোয়ারার কাজে জোরালো
ভূমিকা রেখেছেন পৌরসভার ঘোপ ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকছিমুল
বারি অপু।
এদিকে সরকারি গেজেট ভুক্ত পৌর সভার ৫ সদস্যের একটি টেন্ডার
কমিটি আছে। ওই টেন্ডার কমিটির সভাপতি পৌরমেয়র হায়দার গনি
খান পলাশ। সদস্য সচিব নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পৌরসভার প্রধান
নির্বাহি কর্মকর্তা নাবিদ হোসেন। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন
জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর
আলমগীর কবির সুমন ও পৌর সভার নির্বাহি প্রকৌশলী এস এম শরীফ
হাসান। এই ৫ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই জানেন না ১৩ দোকান
বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি কোন দিন প্রকাশ করা হয়েছে। ৫ সদস্যের কমিটির
সদস্য সচিব নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পৌরসভার প্রধান নির্বাহি
কর্মকর্তা নাবিদ হোসেনের কাছে ১৩ টি দোকন অবৈধ ভাবে বরাদ্দ ও
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ের জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে
তিনি কিছু জানেন না। তিনি নির্বাচনি কাজে খুলনায় ছিলেন।